সময়ের জনমাধ্যম

ফের গুচ্ছ পদ্ধতির ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে নোবিপ্রবি

নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রমে ফের গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথেই থাকছে। ইউজিসি থেকে বাধ্যবাধকতা না থাকলেও গুচ্ছই ভরসা তবে নতুন শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ হয়নি এখনো।

শুক্রবার অনুষ্ঠিত গুচ্ছ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী জুলাইয়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সব প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। আগের শিক্ষাবর্ষে ভর্তিচ্ছুরা যেসব বিষয়ে ভোগান্তির শিকার হয়েছেন সেগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেবে কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও এই তালিকায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবে কিনা সে বিষয়ে আরও পরে জানানো হবে।

গুচ্ছ পূর্ববর্তী সময়ে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হতো নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া। ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে বছরের প্রথম সপ্তাহে ক্লাস শুরু করত এই বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর প্রথম সেশনের ক্লাস শুরু হতে সময় নেয় অতিরিক্ত চার মাস। বর্তমানে ভর্তি পরীক্ষার ছয় মাস পরও ক্লাস শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। 

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমানোর পরিবর্তে ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় বারবার আসা যাওয়া করতে হচ্ছে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের।

আব্দুল্লাহ আল নোমান নামের এক শিক্ষার্থী জানান, ছয় মাস আগে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে এখনো আমরা ক্লাস শুরু করতে পারিনি। শিক্ষা ব্যবস্থায় এমন উদাসীনতায় আমরা চরম হতাশ হয়ে পড়ছি।

সাদিয়া জাহান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, এমনিতেই করোনার কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। এখন এভাবে পড়ালেখা শুরু করার আগেই যদি আমরা সেশনজটে পড়ি তাহলে এর থেকে কীভাবে উঠে দাঁড়াব? সরকারের উচিৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়ায় বিশেষ নজর দেওয়া। 

নোবিপ্রবির চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান পূর্বের ভর্তি পরীক্ষা একটি ঈদের মত আমেজ নিয়ে আসতো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কিন্তু এখন এটি আমাদের গলারকাঁটার মত বিঁধে আছে আমরা চাইলেও সেই আমেজ ফিরিয়ে আনতে পারছিনা।

ভর্তি প্রক্রিয়ার এমন জটিলতার জন্য গুচ্ছ পদ্ধতিকে দায়ী করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সাথে সংশ্লিষ্টরা। নোবিপ্রবির গুচ্ছ টেকনিক্যাল কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিকুর রাহমান খান বলেন, স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি প্রক্রিয়া চালানো এবং গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ার মাঝে অনেক ব্যবধান তৈরি হয়েছে। জিএসটি যেভাবে নিয়ম করে দেয় আমাদের সেইভাবেই কার্যক্রম চালাতে হয়। যার ফলে বর্তমানে অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে। 

গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হওয়ার বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ দিদার-উল-আলম বলেন, আপাতত গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হওয়া সম্ভব না। আমাদের রাষ্ট্রপতির অনেকদিনের আকাঙ্খা হচ্ছে এই গুচ্ছ পদ্ধতি।

গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ায় সেশনজটের প্রশ্নে নোবিপ্রবি উপাচার্য বলেন, জটিলতা তৈরি হয়েছে মূলত শিক্ষার্থীদের কারণেই। তারা অনেক জায়গায় মাইগ্রেশন অন করে রাখে। আবার আদালতে রিটও করেছে। সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীদের কারণেই একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হতে দেরি হচ্ছে। 

গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হওয়ার বিষয়ে স্বায়ত্তশাসনের কথা বলছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) প্রশাসন বিভাগের সচিব ড. ফেরদৌস জামান। তিনি বলেন, প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাদা আলাদা আইন আছে৷ সবাই নিজেদের মত করে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। এটা নির্ভর করবে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর। ইউজিসি থেকে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই যে জিএসটির অধীনে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। চাইলেই যে কেউ এই প্রক্রিয়া থেকে বের হয়ে হয়ে যেতে পারবে।

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় এবং চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।