ফরাসি কিংবদন্তী অভিনেত্রী মহা প্রয়াণ

৯১ বছর বয়সে পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ ছেড়ে গেলেন ফরাসি চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেত্রী ব্রিজিত বার্দো। গেল শতকে সাড়া জাগিয়েছিলেন এই অভিনেত্রী। রোববার তার ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে তার মৃত্যুর কারণ জানানো হয়নি।
রয়টার্স জানিয়েছে, ১৯৫৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড উইম্যান’সিনেমায় খালি পায়ে মাম্বো নাচের দৃশ্য তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি দেয়।
এলোমেলো চুল, দুর্দমনীয় উপস্থিতি আর তীব্র সম্মোহনী শক্তিতে তিনি যৌন আবেদনকে পর্দায় তুলে ধরেন, যেমনটা মূলধারার সিনেমায় আগে খুব কম দেখা গেছে। আর এর মধ্য দিয়েই জন্ম নেয় এক বৈশ্বিক আইকনের।
মাত্র ২১ বছর বয়সে বার্দো ‘সেন্সর’কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দর্শকদের মোহিত করেন। স্বামী রজার ভাদিম পরিচালিত ওই চলচ্চিত্রে তার খোলামেলা, স্বাধীনচেতা অভিনয় আগের যুগের সংযত নারী চরিত্রগুলোর সঙ্গে স্পষ্ট পার্থক্য গড়ে দেয়।
ফ্রান্সে তিনি পরিচিত ছিলেন শুধু ‘বি.বি.’ নামে। জীবনের শেষভাগে তিনি প্রাণি অধিকার আন্দোলন এবং কট্টর ডানপন্থি রাজনৈতিক অবস্থানের জন্যও আলোচিত ছিলেন।
১৯৩৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্যারিসে জন্ম নেওয়া বার্দো বড় হন এক উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারে। নিজেকে তিনি বর্ণনা করেছিলেন লাজুক, তবে আত্মসচেতন এক শিশু হিসেবে, যে চশমা পরত, যার ছিল লম্বা ঢেউ খেলানো চুল।
তবে ১৫ বছর বয়সেই ‘এল’ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে জায়গা করে নেন তিনি। সেখান থেকেই শুরু হয় মডেলিং, পরে চলচ্চিত্রে অভিনয়।
‘অ্যান্ড গড ক্রিয়েটেড উইম্যান’সিনেমায় বার্দোর চরিত্র ছিল মুক্ত নারীসত্তার প্রতীক। বিতর্কই তার আবেদন আরও বাড়িয়ে তোলে। ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকের ফ্রান্সের প্রতীক হয়ে ওঠেন তিনি।
ফরাসি সিনেমার গণ্ডি ছাড়িয়ে তিনি দ্যুতি ছড়ান বিশ্বজুড়ে। বলা হয়, ১৫ বছর বয়সে বব ডিলান তার প্রথম গান লেখেন বার্দোকে নিয়ে। ‘সং ফর ব্রিজিত’নামের ওই গানটি কখনো প্রকাশিত হয়নি। শিল্পী অ্যান্ডি ওয়ারহলও তার প্রতিকৃতি এঁকেছিলেন।
লিঙ্গভিত্তিক প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতা বার্দোকে কেবল ‘সেক্স সিম্বল’নয়, বরং পপ সংস্কৃতির আইকনে পরিণত করে। সামাজিক মনোভাব বদলে দেওয়ার এক পরশ পাথর হয়ে ওঠেন তিনি।
নারীবাদী দার্শনিক সিমোন দ্য বোভোয়ার ১৯৫৯ সালে এস্কোয়ার ম্যাগাজিনে এক লেখায় বার্দোকে তার স্বাধীনচেতা মনোভাবের জন্য প্রশংসায় ভাসান।
তিনি লিখেছিলেন, “বি.বি. ইচ্ছাকৃতভাবে কেলেঙ্কারি ঘটান না। তিনি সহজাত প্রবৃত্তির টানেই এগিয়ে চলেন। ক্ষুধা লাগলে খান, আর ভালোবাসেন একই স্বাভাবিক সরলতায়।”


















