সময়ের জনমাধ্যম

পশ্চিমাদের মার্কেটিং পলিসিতে ধস নামাবে চীন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিদেশি পণ্যের উপর অতিরিক্ত কর আরোপের ঘোষণার থেকে শুরু হওয়া ট্যারিফ যুদ্ধ এখনও চলমান। আমেরিকা চীনা পণ্যের উপর শুল্কের বোঝা বাড়িয়েছে, যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৩৫ শতাংশ পর্যন্ত। এর প্রতিক্রিয়ায় চীনও চুপ নেই, তারাও আমেরিকান পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত পাল্টা শুল্কারোপ করেছে। এই পাল্টাপাল্টি আক্রমণে আপাতদৃষ্টিতে বাণিজ্যের পরিমাণ কম মনে হলেও, এর গভীরতা কিন্তু অনেক বেশি।

এই শুল্ক যুদ্ধে কিছুটা স্তিমিত হয়ে এসেছে বলে মনে হলেও লাক্সারি মার্কেটকে কেন্দ্র করে চীনের নতুন কৌশল যুদ্ধের পালে দিচ্ছে নতুন হাওয়া। বিশ্বজুড়ে যে সমস্ত বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের পণ্য আমরা দেখি—যেমন  Dior, Hermes, Gucci, Armani, Prada, Burberry, চ্যানেল- এগুলোর বেশিরভাগই উৎপাদন হয় চীনের বিভিন্ন কারখানায়। এমনকি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত Apple, Samsung, Sony-র মতো ব্র্যান্ডের অনেক যন্ত্রাংশও তৈরি হয় এই দেশেই।

প্রশ্ন হলো, এই পরিস্থিতিতে চীন কী করছে? তারা শুধু ট্যারিফের মাধ্যমেই জবাব দিচ্ছে? না, তারা বাজার দখলের জন্য অভিনব কৌশল নিয়েছে। সরাসরি এই লাক্সারি ব্র্যান্ডগুলোর আসল উৎপাদন খরচের তথ্য জনসমুক্ষে আনছে চীনের উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে অজস্র ভিডিও দেখা যাচ্ছে যেখানে এই তথ্যগুলো তুলে ধরা হচ্ছে।

এগুলোর বাস্তবতা কেমন তা জানলে অবাক হবেন ভোক্তারা।

* যে Hermes এর বাজারে $২৫,০০০ ডলারে বিক্রি হয়., চীনে এর উৎপাদন খরচ মাত্র $১৮০ থেকে $৩০০ ডলারের মধ্যে।

*Dior-এর একজোড়া জনপ্রিয় হিলের দাম $১২০০ ডলারের আশেপাশে, অথচ এর উৎপাদন খরচ $৪০ থেকে $৮০ ডলারের মধ্যে।

* Gucci Belt, যা $৭০০ ডলারে বিক্রি হয়, তার উৎপাদন খরচ $২৫ থেকে $৫০ ডলারের কাছাকাছি।

* এমনকি Apple-এর iPhone-এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মিলিয়ে উৎপাদন খরচ $১০০ থেকে $১৫০ ডলারের মধ্যে থাকে, যেখানে একটি নতুন আইফোন $১০০০ ডলারের বেশি দামে বিক্রি হয়। এখানে সফটওয়্যার এবং ব্র্যান্ডিং একটি বড় ভূমিকা রাখে, কিন্তু উৎপাদন খরচের এই বিশাল পার্থক্য সত্যিই ভাববার বিষয়।

মজার ব্যাপার হলো, চীন শুধু এই তথ্যগুলো ফাঁস করেই থেমে নেই। তারা সরাসরি একই মানের পণ্য, অর্থাৎ ওইএম (Original Equipment Manufacturer) সংস্করণ, অনেক কম দামে বিক্রির জন্য অনলাইন মার্কেটপ্লেস তৈরি করছে। কিছু ওয়েবসাইট ইতোমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যেখানে আপনি নামিদামি ব্র্যান্ডের মতোই দেখতে এবং একই রকম গুণমানের পণ্য অবিশ্বাস্য কম দামে কিনতে পারবেন। পার্থক্য থাকবে শুধু ব্র্যান্ডের লোগোতে।

এর অর্থ হলো, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে আমরা হয়তো শুধু একটি ব্র্যান্ডের নাম কিনছি, পণ্যের প্রকৃত গুণমান নয়। চীনের এই পদক্ষেপ শুধু বর্তমান বাজার ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে না, বরং পশ্চিমা দেশগুলোর ব্র্যান্ড ইক্যুইটির উপর একটা বড় প্রশ্নচিহ্ন এঁকে দিচ্ছে। এটা সত্যিই একবিংশ শতাব্দীর এক বিশাল অর্থনৈতিক যুদ্ধ, যেখানে চীন সরাসরি আমেরিকান এবং পশ্চিমা কনজিউমারদের ব্র্যান্ড ভ্যালুর ধারণাকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে।