পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে রেলকার লাইনচ্যুত হয়ে কমপক্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও ১৮ জন। বুধবার এই দুর্ঘটনা হয়েছে। গ্লোরিয়া ফিউনিকুলার নামের ওই রেলকার লিসবনের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিশ্বে সমাদৃত।
বৃহস্পতিবার স্থানীয় জরুরি সেবা দপ্তরের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন বিদেশি নাগরিক আছেন বলে জানান ওই মুখপাত্র। গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, আহতদের মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
লিসবনের মেয়র কার্লোস মোদাস গণমাধ্যমকে বলেছেন, 'এটি আমাদের শহরের জন্য একটি মর্মান্তিক দিন…লিসবন আজ শোকে নিমজ্জিত। এটি খুবই মর্মান্তিক একটি ঘটনা।'
বুধবারের ওই দুর্ঘটনার পর সরকারি নির্দেশে বৃহস্পতিবার পর্তুগালে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হচ্ছে।
গণমাধ্যমের প্রকাশিত ভিডিওতে ধ্বংস হওয়া হলুদ রঙের ফিউনিকুলারটি দেখা যায়। এটা দেখতে অনেকটা ট্রামের মতো। ক্যাবল কারের আদলে নির্মিত এই ট্রেনটি পর্তুগালের রাজধানীর পাহাড়ি এলাকা থেকে সমতল ভূমিতে যাত্রীদের আনা-নেওয়া করতো। ফুটেজে উদ্ধারকর্মীদের ধ্বংসস্তূপ থেকে আহতদের বের করে আনতে দেখা যায়।
সিএনএন পর্তুগালের ভিডিওতে দেখা গেছে, অন্য বগি লাইনচ্যুত হওয়ার সময় নিচের বগি ভয়ানকভাবে কেঁপে ওঠে। এ সময় বেশ কয়েকজন যাত্রী আতংকিত হয়ে জানালা দিয়ে লাফ দেন। সবাই চিৎকার করতে শুরু করে।
প্রেসিডেন্ট মার্সেলো রেবেলো দে সৌসা এক বিবৃতিতে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেছেন, শিগগির কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার কারণ খুঁজে বের করতে পারবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুলিশের তদন্তকারীরা। প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয় জানিয়েছে, অবিলম্বে আনুষ্ঠানিক তদন্ত কার্যক্রম শুরু হবে। গণপরিবহনে দুর্ঘটনার বিষয়ে এ ধরনের তদন্ত স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
১৮৮৫ সালে এই রেললাইন চালু হয়। এটি লিসবনের ডাউনটাউনের রেস্তোরাঁদোরেস স্কোয়ারের সঙ্গে বাইররো আলতো (উচ্চ কোয়ার্টার) এর সংযোগ স্থাপন করেছে। প্রতি বছর গ্লোরিয়া লাইনে গড়ে ৩০ লাখ মানুষ যাতায়াত করে থাকেন।
এই রেললাইন পরিচালনার দায়িত্বে আছে পৌরসভা গণপরিবহন প্রতিষ্ঠান- ক্যারিস। লিসবনে ক্যারিস পরিচালিত তিনটি ফিউনিকুলার লাইন আছে। এগুলো পর্যটক ও স্থানীয় জনগণ উভয়ই ব্যবহার করে।
বিবৃতিতে ক্যারিস জানায়, 'দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছিল। মাসিক ও সাপ্তাহিক রক্ষণাবেক্ষণ ও দৈনিক পরিদর্শন প্রক্রিয়ার আওতায় ছিল এটি।'
সাম্প্রতিক সময়ে পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে লিসবন। গত এক দশক ধরে চলছে এই ধারা। বিশেষত, গ্রীষ্ম মৌসুমে জনপ্রিয় ডাউনটাউন এলাকায় অসংখ্য পর্যটকের আনাগোনা দেখা দেয়।