সময়ের জনমাধ্যম

নোয়াখালীতে নারী-শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়েছে

নোয়াখালীতে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা বেড়ে চলেছে। চলতি বছরের জুলাই মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে নারী ও শিশুর প্রতি ৩৯টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ২৬ নারী, কিশোরী ও শিশু। যাদের অধিকাংশের বয়স ছয় থেকে ১৮ বছর। জাতীয় ও স্থানীয় ১৮টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে নারী অধিকার জোট নোয়াখালী।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নোয়াখালী প্রেস ক্লাবের সহিদ উদ্দিন এস্কান্দার কচি মিলনায়তনে নাগরিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন, নারী অধিকার জোট, নোয়াখালীর সভাপতি লায়লা পারভীন, সদস্য সচিব মনোয়ারা আক্তার মিনু। এসময় উপস্থিত ছিলেন জোটের সদস্য নারী নেত্রী রওশন আক্তার লাকী, অ্যাডভোকেট ফাহমিদা জেসমিন।

নারী অধিকার জোট নোয়াখালীর এই ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নারীদের ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়ে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে বারবার ধর্ষণে বাধ্য করা, তিন কিশোরীকে অপহরণ করে ধর্ষণ করা, যৌতুকের দাবিতে সাতজন নারীকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষক কর্তৃক ১০ শিশুকে বলৎকারের অভিযোগও রয়েছে। প্রতিবন্দ্বী শিশু ও নারীও ধর্ষণের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না।

সংবাদপত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নারী নির্যাতনের ঘটনা সবচেয়ে বেশি সংঘঠিত হয়েছে সদর ও সুবর্ণচর উপজেলায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও পত্রিকায় প্রকাশিত হয় না। স্থানীয়ভাবে সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের মত সহিংসতার ঘটনাও মীমাংসা করে দেয়া হয়। অনেক ভুক্তভোগী থানায় মামলা করতে চাইলেও প্রভাবশালীরা বাধা দেয়। স্থানীয়ভাবে বিচার করে অভিযুক্তকে জরিমানা ও বেত্রাঘাত করে অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। গৃহবধুকে নির্যাতন করে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলে।

নাগরিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাল্যবিয়ে দিতে চেষ্টা করায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে, চকলেটের লোভ দেখিয়ে প্রতিবন্ধী কিশোরীকে ধর্ষণ, জাম পেড়ে দেয়ার লোভ দেখিয়ে সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণ এবং মসজিদের ভেতর মানসিক প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে অদিতা ধর্ষণ ও হত্যা এবং এরপর দুই ছাত্রীকে ব্লেড দিয়ে গলাকাটার চেষ্টার ঘটনায় নাগরিক সমাজ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

প্রতিবেদনে সহিংসতা দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিক সংঘবদ্ধতা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। সেই সাথে সমস্যা উত্তরণে আটটি দাবিও তুলে ধরা হয়েছে।