সময়ের জনমাধ্যম

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে ‘প্রজ্ঞা ও প্রয়োগের ব্যঞ্জনা’ শিরোনামে চিত্র প্রদর্শনী

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়দিনব্যপী ‘প্রজ্ঞা ও প্রয়োগের ব্যঞ্জনা’ শিরোনামে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী চলছে। রোববার সকালে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর। চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিং বিভাগের মাস্টার্সের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছয়জন শিক্ষার্থীর চিত্রকর্ম প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে।

প্রদর্শনীর উদ্বোধন করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর বলেন, ‘চিত্র এমন একটা ব্যাপার যিনি আঁকেন তিনি শুরু করেন একরকম করে তৈরি করতে করতে যখন গিয়ে শেষ করেন সেখান থেকে অনেকটা দূরে সরে যান। এই যে সরে যাওয়াটাই হচ্ছে এখানে প্রজ্ঞা। প্রজ্ঞার সাথে নিজের যে ব্যঞ্জনা এটির যথাযথ প্রয়োগ এখানে ঘটে। চিত্র যতবার দেখা যায় সেখান থেকে নতুন নতুন কথা ভাবনা প্রতিবার প্রকাশিত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘চিত্র এমন একটি মাধ্যম যে মাধ্যম কখনো একটা কথাই সবসময় বলে না। এটি নানা সময়ে নানা রকমে তার মাত্রা তৈরি করে। যত পরিবর্তন করে এটি ততবেশি অ্যবসট্রাক্ট হয়ে যায়। চিত্রশিল্পের যে ইতিহাস এর সাথে আমাদের জীবন জগৎ ও সভ্যতার ইতিহাস রয়েছে। একারণে চিত্রকে কখনো জীবন থেকে পৃথক করা যাবে না। যারা চিত্রকে জীবন থেকে পৃথক করার কথা ভাবেন, শিল্পচর্চার বিরোধিতা করেন তারা আসলে জীবনের বিরোধিতা করেন। জীবন চর্চার বিরোধিতা করার মানেই হলো মৃতের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করা। যা আমরা চাই না। তাই নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই আয়োজনকে আমরা সাধুবাদ দেই।’

চারুকলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নগরবাসী বর্মণের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন সহযোগী অধ্যাপক (ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিং) মাসুম হাওলাদার। আলোচনা করেন চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক ড. তপন কুমার সরকার, অধ্যাপক ড. এমদাদুর রাশেদ, সহযোগী অধ্যাপক দ্রাবিড় সৈকত, সহকারী অধ্যাপক কল্যাণাংশু নাহা, সহকারী অধ্যাপক দিদারুল হোসাইন লিমন ও প্রভাষক রাশেদুল ইসলাম।

আয়োজকরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবনের নীচ তলায় চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিং বিভাগের ক্লাসরুমে নজরুল গ্যালারি নামকরণ করে এই চিত্র প্রর্দশনীর আয়োজন করা হয়েছে। ৩০ শে মার্চ থেকে শুরু হওয়া প্রদর্শনী চলবে ছয় এপ্রিল পর্যন্ত। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা দেখতে পারবেন।

প্রর্দশনীর সদস্য সচিব শিল্পী সাদ আদনান বলেন, আমাদের ড্রয়িং এন্ড পেইন্টিং বিভাগের এমএফএ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী শিল্পী জবা রায়, সাবিহা আফরোজ, সানজিদা পারভীন মুন, নিখিল চন্দ্র সরকার, লামিয়া আক্তারসহ মোট ছয়জন শিল্পীর ৩৬টি চিত্রকর্ম নিয়ে প্রথমবারের মতো এই প্রর্দশনীর আয়োজন করা হয়েছে। আমাদের এই আয়োজন পরর্বতীতে বিভাগের ছোট ভাই বোনদের শিল্পজগতে প্রবেশে আগ্রহ বৃদ্ধি করবে, তাই ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে চিত্র প্রদর্শনী করা হবে সেই আশা রাখি।’

প্রর্দশনীর আহ্বায়ক শিল্পী জবা রায় বলেন, ‘শিল্প কি কখনো কেন্দ্রমুখী আচরণ করে? কিংবা কেন্দ্রবিন্দুতেই কেবল উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে আমরা প্রায় নয় বছর নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একসাথে কাটিয়েছি। মাস্টার্সের শেষদিকে এসে শিল্প সম্পর্কিত নানা তত্ত্ব অধ্যয়নের পর আমরা সবাই একমত হলাম যে, শিল্প কখনো কেন্দ্রমুখী হয় না, শিল্পকলায় কেন্দ্রমুখী আধুনিকতার শেকল পরায় কেবল মানুষ, শিল্পের শাখা প্রশাখার ভাবনা সুদূরপ্রসারী যা বহুভাবে বেঁচে থাকার রাস্তা তৈরি করে দেয়। আমাদের চিত্র প্রদর্শনীর মূল উদ্দেশ্যই হলো এদেশের শিল্পকলার কেন্দ্রমুখীতা ভেঙে বহুমুখী শিল্পচর্চার ভবিষ্যৎ খুঁজে বের করা। দীর্ঘ নয় বছরের জ্ঞান কীভাবে দক্ষতার সাথে প্রয়োগ ঘটিয়ে তার ব্যঞ্জনা সবার কাছে ছড়িয়ে দেয়া যায় এ ভাবনা থেকেই আমরা প্রদর্শনীর শিরোনাম দিয়েছি ‘প্রজ্ঞা ও প্রয়োগের ব্যঞ্জনা’।