বিশ্বজুড়ে সামরিক উপস্থিতি বিস্তারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিয়ানমারসহ বেশ কয়েকটি দেশে কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা করছে চীন। এমন দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (ডিআইএ) বার্ষিক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
‘২০২৫ ওয়ার্ল্ডওয়াইড থ্রেট এসেসমেন্ট’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, চীন তার বৈশ্বিক সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মার্কিন সামরিক জোট ও নিরাপত্তা অংশীদারদের প্রভাব দুর্বল করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পূর্ব এশিয়ায় প্রধান শক্তিধর দেশ হওয়ার কৌশলগত লক্ষ্য বজায় রেখেছে চীন। তাইওয়ানকে মূল ভূখণ্ড চীনের সঙ্গে একীভূত করা, চীনের অর্থনীতির উন্নয়ন ও স্থিতিস্থাপকতাকে এগিয়ে নেওয়া এবং মধ্য শতাব্দীর মধ্যে প্রযুক্তিগতভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দেশটি বিশ্ব নেতৃত্বের জন্য আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জও জানাচ্ছে।’
ডিআইএ বলছে, চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের মোকাবিলা করতে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ‘কূটনৈতিক, তথ্যগত, সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আমেরিকা ও তার মিত্রদের মোকাবিলা করার জন্য চীন তার বৈশ্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে চলেছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ইন্দো-প্যাসিফিক ও তার আশপাশের অঞ্চলে আমেরিকা ও তার মিত্রদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। এই প্রতিযোগিতায় চীনকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত করতে তিনি নানা উদ্যোগ নিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন সামরিক জোট ও তার নিরাপত্তা অংশীদারত্বের জন্য সমর্থনকে দুর্বল করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা।’
চীনের সামরিক সম্প্রসারণ সংক্রান্ত অংশে বলা হয়েছে, ‘চীনে থেকেই টানা লম্বা সময় কার্যক্রম চালানোর জন্য পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) বা গণমুক্তি বাহিনীর ব্যবস্থাপনা আরও উন্নত করছে দেশটি। এছাড়া আরও শক্তিশালী বিদেশি সরবরাহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করছে চীন। এই বাহিনীর সেনাদের আরও বেশি দূরত্বে মোতায়েন রাখার জন্য অবকাঠামো তৈরি করছে। এই প্রচেষ্টা মার্কিন বৈশ্বিক কার্যক্রম কিংবা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘চীন সম্ভবত বার্মা (মিয়ানমার), থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), কিউবা, কেনিয়া, গিনি, সেশেলস, তানজানিয়া, অ্যাঙ্গোলা, নাইজেরিয়া, নামিবিয়া, মোজাম্বিক, গ্যাবন, বাংলাদেশ, পাপুয়া নিউগিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ ও তাজিকিস্তানে পিএলএ–এর সামরিক উপস্থিতির কথাও বিবেচনা করছে।’
এছাড়াও, কম্বোডিয়ায় চীনের সামরিক সহযোগিতা সম্পর্কেও প্রতিবেদনটিতে আলোকপাত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘গত ৫ এপ্রিল কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী ও চীনের পিএলএর একটি প্রতিনিধিদল কম্বোডিয়ার রিম নৌ ঘাঁটিতে যৌথ লজিস্টিকস এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করে। চীনের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, কেন্দ্রটি সন্ত্রাসবাদ দমন, দুর্যোগ প্রতিরোধ, মানবিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণের মতো ক্ষেত্রে যৌথ অভিযান কার্যক্রমকে সহযোগিতা করবে।’
চীনের এই সামরিক উদ্যোগের ধরন ব্যাখ্যা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘একটি মিশ্র ব্যবস্থায় চীন এসব কার্যক্রম চালায়। এতে গ্যারিসন বাহিনী (নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থানরত সেনা) ও ঘাঁটি রাখা হয়। এছাড়া যেসব দেশে এসব কার্যক্রম চালানো হয়, সেসব দেশের বাহিনীও যুক্ত হয়, সুবিধা পায়। এর বাইরে বাণিজ্যিক অবকাঠামোও থাকে এতে। গত বছর তানজানিয়ায় এমনই করেছে চীন।’
তানজানিয়ায় পিএলএ -এর সামরিক মহড়ার প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়, ‘গত বছর তানজানিয়ায় অত্যন্ত সুপরিকল্পিত মহড়া পরিচালনা করে পিএলএ, যা আফ্রিকায় চীনের সর্ববৃহৎ সামরিক মহড়া। এই মহড়ায় সমুদ্র ও আকাশপথে এক হাজারের বেশি সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দেয় এই বাহিনী।’
চীনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিষয়ে সরাসরি হুমকি না থাকলেও পিএলএ এর সম্ভাব্য সামরিক পরিকল্পনার তালিকায় নাম উঠে আসায় তা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।