কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল তিস্তার পানি। তবে নদীর পানি কিছুটা কমলেও দুর্ভোগ বেড়েছে নদীপারের মানুষদের। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় পানিবন্দি পরিবারগুলো ঘরে ফিরতে পারেনি। ভাঙনে সেতু প্রতিরক্ষা বাঁধ ধসে পড়ছে। ভাঙন তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় অনেকে ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার (৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার) ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলেও বেলা ১২টায় তা ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বেলা তিনটার পর থেকে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। ফলে ভাটি এলাকাগুলোতে বন্যা দেখা দেয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সবকটি (৪৪টি) জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে। তবে শুক্রবার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আগামী দুইদিন এই অঞ্চলে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢল অব্যাহত থাকতে পারে। এর প্রভাবে রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামে ক্ষণস্থায়ী বন্যা দেখা দিতে পারে।
গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, কোলকোন্দ, লক্ষ্মিটারী, গজঘণ্টা ও মর্ণেয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন চরাঞ্চলের ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে থাকায় পাশের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন বাসিন্দারা। অনেকেই ঘরবাড়িসহ সংসারের জিনিসপত্র অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। প্রবল স্রোতে রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরে নির্মিত দ্বিতীয় তিস্তা সেতু রক্ষায় ৯০০ মিটার বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার জায়গার ব্লক ধসে গেছে। সেখানে প্রায় ৭০ ফুট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে রংপুর-লালমনিরহাট সড়কসহ ওই এলাকার হাজারখানেক পরিবার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতু রক্ষা বাঁধটি গত দুই বছরের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। গত কয়েকদিন ধরে নদীতে পানি বাড়া-কমায় সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ৬০ মিটার জায়গায় ব্লক ধসে পড়েছে। নদীর তীব্র স্রোত সরাসরি এসে আঘাত হানছে বাঁধের গায়ে। এতে নিচের অংশের মাটি ভেসে গিয়ে ধসে পড়ছে ব্লগুলো।
লক্ষ্মিটারী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, পানির স্রোতে বাঁধের ব্লগুলো ধসে যাচ্ছে। বাঁধটি ভেঙে গেলে সেতুর নিচ দিয়ে আর স্রোত যাবে না। নদীর আলাদা চ্যানেল তৈরি হবে এবং তিন গ্রামের সহস্রাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাবে। এমনিতে বন্যা দেখা দিয়েছে। তার ওপর ভাঙন আতঙ্কে আশপাশের লোকজন উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
লক্ষ্মিটারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, এ ইউনিয়নে ৫০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এর আগে দুই বারের বন্যায় যখন বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। কিন্তু তারা কোনও পদক্ষেপ নেয়নি। এবার যেভাবে পানি এসে বাঁধটিতে সরাসরি আঘাত হানছে তাতে করে উজানে আর একটু বৃষ্টি হলে এই বাঁধ ভেঙে যাবে। এতে পানি এসে সরাসরি আঘাত হানবে লালমনিরহাট-রংপুর সড়কে। এতে সড়কটি ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার লক্ষ্মিটারী, কোলকোন্দ ও মর্ণেয়া ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে প্রায় ১০ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, ‘তিস্তার পানি বাড়া ও কমার সঙ্গে সঙ্গে মহিপুরে তিস্তা সেতুর পশ্চিম অংশের বাঁধটিতেও নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
বন্যায় তিস্তার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বন্যা-ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে।