ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশ এক বার্তায় জানিয়েছে, সাম্য হত্যার ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। তবে তাদের নাম পরিচয় জানায়নি পুলিশ।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে ছুরিকাঘাতে আহত হন শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫)। রাত ১২টার দিকে সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, রাতে সাম্যর বন্ধুরা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। এরপর চিকিৎসক পরীক্ষা করে মৃত ঘোষণা করেন। তার ডান পায়ে ধারাল অস্ত্রের আঘাত ছিল।
সাম্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলায়। তার বন্ধুরা জানিয়েছেন, ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত সাম্য এফ রহমান হলের ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন।
সাম্যকে ছুরিকাঘাতের ঘটনার বিবরণ দিয়ে রাফি ও তার আরেক বন্ধু আবাবিল আহমেদ বিশাল বলেন, রাতে মোটরসাইকেল চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুক্ত মঞ্চের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন সাম্য। এসময় অন্য একটি মোটরসাইকেলের সঙ্গে তার মোটরসাইকেলের ধাক্কা লাগলে উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং ধস্তাধস্তি হয়।
এক পর্যায়ে সাম্যকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডান পায়ের উরুতে আঘাত করে পালিয়ে যায় ওই মোটরসাইকেলের আরোহী। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে তার মৃত্যু হয়।
সাম্য খুন হওয়ার প্রতিবাদে হাসপাতালে জড়ো হওয়া তার বন্ধু, সহপাঠী ও সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে আসে। রাত পৌনে ২টার দিকে স্যার এফ রহমান হলের সামনে থেকেও বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে সব মিছিল ভিসি চত্বরে এসে জড়ো হয়। সেখানে তারা বিভিন্ন স্লোগান দেন।
পরে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন। তখন অনেকে ভিসির বিরুদ্ধেও ‘শেইম-শেইম বলে স্লোগান দিতে থাকে। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিছিলে যোগ দেন উপাচার্য।
মিছিল শেষে, উপাচার্য ও প্রক্টর নিহত শিক্ষার্থীকে দেখতে ভেতরে ঢুকতে চাইলে শিক্ষার্থীদের বাধায় ঢুকতে পারেননি। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘অথর্ব প্রক্টর, মানি না মানব না’, ‘অথর্ব ভিসি-মানি না, মানব না’ সহ নানা স্লোগান দেয়। পরে পরিস্থিতি খারাপের দিকে গেলে হাসপাতাল থেকে অ্যম্বুল্যান্সে করে স্থান ত্যাগ করেন উপাচার্য ও প্রক্টর।
এদিকে, সাম্যের মৃত্যুর ঘটনায় শোক প্রকাশ করে এই ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের উপ-পরিচালক ফররুখ মাহমুদের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতে কাজ করছে।
শাহবাগ থানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে এবং নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতারও আশ্বাস দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঘটনার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা) অধ্যাপক মামুন আহমেদ, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সেখানে শিক্ষকরা শোকসন্তপ্ত পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের পক্ষ থেকে নিহতের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
একই সঙ্গে তারা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন এবং দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য তাগিদ দেন বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।