ড্রাগন ও হাতি একসঙ্গে নাচাতে সম্মত শি-মোদি, যুক্তরাষ্ট্রের খবরদারি কমবে


সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার- এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন বিশ্বনেতারা। উত্তরাঞ্চলীয় শহর তিয়ানজিনে রোববার সম্মেলনের প্রথম দিন শি জিনপিং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় এসসিওকে বড় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন– চীন একটি স্থিতিশীল শক্তি, যা শান্তি রক্ষা করবে এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের নেতৃত্ব দেবে। চীন মূলত চাইছে পশ্চিমা দেশগুলোর বাইরে নতুন একটি বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে, যেখানে মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারে ভারত ও রাশিয়া।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের খবর বলছে, এসসিও শীর্ষ সম্মেলন শুরুর আগে এক স্বাগত ভোজসভায় জিনপিং বলেন, এসসিও একটি নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হয়ে উঠেছে। সম্মেলনের ফাঁকে তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সরাসরি বৈঠকে বসেন। সেখানেও তারা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাকে ‘বহুমুখী’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তাদের লক্ষ্য- ক্ষমতা যেন শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হাতে সীমাবদ্ধ না থাকে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ শাপেবর হয়েছে বেইজিংয়-নয়াদিল্লির জন্য। সাত বছর পর চীন ও ভারতের শীর্ষ দুই নেতার বৈঠক বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উষ্ণতার বার্তা দিচ্ছে। জিনপিং মোদিকে বলেছেন, দুই দেশের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হলো বন্ধুত্ব করা।
চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আজকের দুনিয়া এমন বড় পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল ও অস্থির। আমাদের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত হলো, একজন আরেকজনের ভালো প্রতিবেশী, বন্ধু এবং সাফল্যের অংশীদার হওয়া। ড্রাগন ও হাতি একসঙ্গে নাচুক। প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, বরং অংশীদার হিসেবে এগিয়ে গেলে সম্পর্ক দীর্ঘ মেয়াদে স্থিতিশীল থাকবে।’
আর সীমান্তে উত্তেজনা কমে আসার কথা উল্লেখ করে মোদি বলেন, ‘ভারত পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্মানের ভিত্তিতে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমাদের দুই দেশের মোট ২৮০ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে সহযোগিতার ওপর।’
প্রশ্ন হচ্ছে- ভারত চীনের এমন মাখামাখি দেখে ওয়াশিংটন কী ভাবছে? সিএনএন বলছে, ইতিবাচক এই বার্তাগুলো বিশেষভাবে নজরে আসবে ওয়াশিংটনের। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক সাম্প্রতিক সময়ে শীতল হয়েছে। ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ এবং পরে রাশিয়া থেকে তেল-গ্যাস আমদানির কারণে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। চীন রাশিয়ার বড় ক্রেতা হলেও, এখনও সে ধরনের শাস্তি পায়নি।
এই সম্মেলনে ভারত, চীন ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতকা এবং বহুপক্ষীয় বৈঠক ওয়াশিংটনের জন্য নিশ্চিতভাবে সতর্কবার্তা। এটি নিশ্চিতভাবে নতুন বৈশ্বিক শক্তির আভাস দিচ্ছে আর যুক্তরাষ্ট্রের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যে প্রভাব তাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।
এদিকে, সোমবার নরেন্দ্র মোদি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথেও বৈঠক করবেন। সম্মেলনে যোগ দিতে রোববারই পুতিনে তিয়ানজিনে পৌঁছান। এসসিওর শীর্ষ সম্মেলনে চীন, ভারত, রাশিয়া ছাড়াও ইরান, পাকিস্তান, কাজাখস্তানসহ মধ্য এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশের নেতা অংশ নিচ্ছেন।
চীন চায়, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের নিরাপত্তা জোট (কোয়াড) যতটা সম্ভব দুর্বল হোক। তাই জিনপিং বেইজিং-নয়াদিল্লির উন্নয়ন ও সহযোগিতার ওপর জোর দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা একই সময়ে উন্নয়ন ও পুনর্জাগরণের পথে রয়েছি। আমাদের উচিত উন্নয়নকেই সবচেয়ে বড় মিল হিসেবে দেখা, একে অপরকে এগিয়ে নেওয়া।’
গত অক্টোবরে রাশিয়ায় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মোদি ও জিনপিংয়ের সাক্ষাতের পর দুদেশের সম্পর্ক ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে। দুদেশের মধ্যে সরাসরি পুনরায় ফ্লাইট চালু হচ্ছে। তিব্বতের কাইলাশ মানস সরোবর তীর্থযাত্রা ভারতীয়দের জন্য আবার খুলে দেওয়া হয়েছে। উভয় দেশই পর্যটন ভিসা ইস্যু শুরু করেছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, তাদের মধ্যে দীর্ঘদিনের বৈরিতা পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না। তবুও, রোববারের বৈঠকে উভয় নেতা স্পষ্ট করে দিয়েছেন, মতভেদ যেন বিরোধে না গড়ায়। উভয়ের স্বার্থে স্থিতিশীল সম্পর্ক ও সহযোগিতা জরুরি। সেই সঙ্গে দুই দেশের উন্নয়ন ও বিশ্বে নতুন শক্তির ভারসাম্য গড়তে একসাথে কাজ করা এবং একটি বহুমুখী বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।