সময়ের জনমাধ্যম

ঠিকানা মিললো ময়লার স্তুপ থেকে উদ্ধার কন্যাশিশুটির

মাদারীপুরে ময়লার স্তুপ থেকে উদ্ধার হওয়া কন্যাশিশুটির ঠাঁই মিলেছে একটি পরিবারে। আদালতের মাধ্যমে শিশুটিকে দত্তক নিয়েছেন রাজবাড়ী জেলার এক দম্পত্তি। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় মাদারীপুরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালত থেকে শিশুটিকে ওই দম্পতিকে দত্তক নেয়ার আদেশ দেয়া হয়।

গত রোববার সকালে কুলসুম আক্তার নামে এক পথচারী মাদারীপুর পৌরসভার বটতলা এলাকার একটি চায়ের দোকানের পাশে ময়লার স্তুপ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে। পরে তাকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। বর্তমানে শিশুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

দত্তক পাওয়া দম্পতির আইনজীবী রুবিনা আক্তার বলেন, ‘আজিবর হাওলাদার ও মরিয়ম আক্তার দুজনই সরকারি চাকরিজীবী ও উচ্চশিক্ষিত। এই দম্পতি রাজবাড়ী জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কর্মরত। অন্য আরও যারা আবেদন করেছেন তারাও যোগ্য ছিলেন। তবে আমি যাদের হয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেছি, এই দম্পত্তি বিয়ের ১৩ বছর চলছে। তাদের সন্তান হওয়ার আর কোন সম্ভাবনা নেই। এ কারণে সবকিছু চিন্তা করে বিচারক শিশুটির দায়িত্ব মরিয়ম আজিবর দম্পত্তিকে দেন।’

আদালত সূত্র জানায়, ময়লার স্তুপ থেকে উদ্ধার নবজাতকটি দত্তক নিতে গত তিন দিন ধরে আগ্রহী দম্পতিরা ভিড় করতে থাকেন। সবশেষ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত আদালতে ১৯ জন দম্পত্তির আবেদন জমা পড়ে। তিনঘন্টা ধরে চলে শুনানী। বৃহস্পতিবার জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মামুনুর রশিদ এজলাসে শুনানী করেন আবেদনকারীদের। প্রথম পর্যায়ে ১৫ জন বাদ পড়লে বাকি ৪ জনের যোগ্যতা অনুসারে আবারও চলে শুনানী। পরে ৭ লাখ টাকা ফেরতযোগ্য জামানতে মরিয়ম আক্তার ও আজিবর হাওলাদার দম্পতিকে নবজাতক দত্তক দেন আদালত। 

চিফ জুডিশিয়াল আদালতের নাজির মু. শহিদুল ইসলাম বলেন, নবজাতক কন্যাশিশুটিকে পাওয়ার জন্য আদালতে ১৯ দম্পত্তি আবেদন করেন। আদালত সব আবেদনকারীর সম্পত্তি, সামাজিক অবস্থান, শিক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অবগত হন। এরপর চারটি দম্পত্তি বাছাই করে সবার বক্তব্য গ্রহণ শেষে সাত লাখ টাকা অফেরতযোগ্য বন্ডে রাজবাড়ী সদর উপজেলার সাদিপুর এলাকার আজিবর হাওলাদার ও মরিয়ম আক্তার নামে নিঃসন্তান দম্পতিকে শিশুটির দায়িত্ব নেওয়ার আদেশ দেন বিচারক। 

তিনি আরও বলেন, পরিচয়হীন শিশুটি নতুন ঠিকানা পাওয়ায় আমরা সবাই খুশি। সাতদিনের মাথায় নবজাতকের নামকরণ করা হবে। আর এখন থেকে পুরো দায়িত্ব পালন করবেন মরিয়ম আবিজর দম্পতি।

মরিয়ম আক্তার বলেন, ‘আমাদের কোন সন্তান নেই। আদালতের সিদ্ধান্ত মতে আমরা মেয়েটিকে ইসলামিক দৃষ্টিকোন থেকে মানুষ করে তুলবো। আমাদের স্বামী-স্ত্রী দুজনের যা সম্পত্তি আছে, সবকিছুই এই মেয়ের নামে লিখে দেব।’

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক নুরুল ইসলাম বলেন, শিশুটি বর্তমানে সম্পূর্ণ সুস্থ। আদালতের রায় আসার পরপরই শিশুটিকে ওই পরিবারের কাছে তুলে দেওয়া হবে।

এদিকে নবজাতক শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া কুলসুম আক্তার ও ইমরান খান দম্পত্তিও শিশুটিকে দত্তক নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। নিঃসন্তান এই দম্পতি শিশুটিকে শুরু থেকে সেবা যত্ন করলেও দত্তক না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

কুলসুম আদালত প্রাঙ্গনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘শিশুটিকে উদ্ধারের পরে দুধ খাওয়ানো, জামা পরানো থেকে শুরু করে সবকিছু করেছি। কিন্তু আজ টাকার কাছে আমি হেরে গেলাম। সাত লাখ টাকা থাকলে হয়তো আমিও শিশুটির মা হতে পারতাম। সাত লাখ টাকা মূল্যে শিশুটি এক পর্যায় বিক্রি করে দেওয়া হলো। অথচ আমাদের দেওয়া হলো না। আমি আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো।’