সময়ের জনমাধ্যম

ট্রাম্প বনাম মাস্ক: যে দ্বন্দ্ব বিশ্ব রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলবে

আধুনিক দুনিয়ায় রাজনীতি আর প্রযুক্তির সম্পর্ক বেশ গভীর। কিন্তু যখন রাজনীতির সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি এবং প্রযুক্তি জগতের সবচেয়ে প্রভাবশালী উদ্যোক্তার মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, তখন এর প্রভাব যুক্তরাষ্ট্রের গণ্ডি ছাড়িয়ে নারা দেয় বিশ্বকেও। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পপুলিস্ট রাজনীতির অন্যতম মুখ। ইলন মাস্ক বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি, Tesla, SpaceX, Neuralink ও X এর মালিক। একজনের বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম নিয়ন্ত্রক, আরেকজনের হাতে প্রযুক্তি আর জনমত নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার।

এক সময় মাস্ক ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতিকে সমর্থন করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও ট্রাম্পের হয়ে কাজ করতে দেখা গেছে মার্কিন শীর্ষ ধনকুবেরকে। ট্রাম্পের কর ছাড় এবং ব্যবসাবান্ধব নীতিগুলোও মাস্কের পক্ষে ছিল। কিন্তু ২০২৫ সালে ট্রাম্পের বাজেট পরিকল্পনা এবং বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর হুমকিকে কেন্দ্র করে মাস্কের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব শুরু। মাস্ক মনে করেন, সরকার প্রযুক্তিখাতে হস্তক্ষেপ করে উদ্ভাবন ও বিনিয়োগের সুযোগ নষ্ট করছে। আর ট্রাম্প ভাবেন, মাস্কের মতো টেক বিলিয়নিয়াররা নিজেদের স্বার্থে রাজনীতি প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন।

এই দ্বন্দ্বের আন্তর্জাতিক প্রভাব কেমন হবে?

প্রযুক্তি বিশ্বে বিভক্তি:

মাস্কের X এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলো ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে ডানপন্থী রাজনীতিবিদরা নতুন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিনিয়োগে উৎসাহী হতে পারে। যেমন আগে ট্রাম্প ‘Truth Social’ চালু করেছিলেন। ফলে প্রযুক্তি জগতে নতুনভাবে বিভক্তি তৈরি হতে পারে।

 চীন ও রাশিয়ার সুযোগ:

যুক্তরাষ্ট্রের এই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব বিশ্ব রাজনীতিতে চীন ও রাশিয়াকে লাভবান করতে পারে। কারণ, তারা পশ্চিমা টেক ও রাজনীতির বিভাজন কাজে লাগিয়ে নিজেদের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করবে।

বিনিয়োগ ও স্টক মার্কেটের অনিশ্চয়তা:

মার্কিন রাজনীতির অস্থিরতা বৈশ্বিক বিনিয়োগ পরিবেশে অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। Tesla, SpaceX বা Starlink-এর মতো কোম্পানিগুলোর ওপর সরকারি চাপে তাদের শেয়ার মূল্যে প্রভাব পড়তে পারে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মহাকাশ খাত:

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মহাকাশ গবেষণায় মাস্কের আধিপত্য খর্ব করার জন্য মার্কিন সরকার নিজস্ব প্রকল্প চালু করতে পারে। এর ফলে এই খাতগুলোতে প্রতিযোগিতা বেড়ে যেতে পারে।

ভবিষ্যতের সম্ভাব্য চিত্র:

মাস্ক কি নিজেই রাজনীতিতে প্রবেশ করবেন? তিনি এর আগেও বলেছেন, রাজনীতি তাঁর পছন্দ নয়, কিন্তু প্রয়োজনে তিনি কিছু পদক্ষেপ নেবেন। ট্রাম্প কি মাস্কের ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির  উদ্যোগ নেবেন? তার অতীত বক্তব্যে এমন হুমকিও ছিল। নাকি দু’জন আবারও সমঝোতায় পৌঁছাবেন?

মনে রাখতে হবে এই ধরনের দ্বন্দ্ব শুধু দুই ব্যক্তির ক্ষমতার লড়াই নয়, বরং বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি ও প্রযুক্তির গতিপথও বদলে দিতে পারে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্র কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মহাকাশ গবেষণা, সামাজিক মাধ্যম ও বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধরনের ভূমিকা রাখে, সেখানে নেতৃত্বের সংকট গোটা বিশ্বের জন্য ঝুঁকি তৈরি করবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।