ট্রাম্প প্রশাসনের বিষয়ে জনসম্মুখে ক্ষোভ প্রকাশ করায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় জরুরি পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনা দপ্তরের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বুধবার এই তথ্য জানিয়েছে এএফপি।
গত সোমবার ছিল হ্যারিকেন ক্যাটরিনার ২০তম বার্ষিকী। সেদিন একটি খোলা চিঠিতে ওই দপ্তরের সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে ১৮২ জন কর্মকর্তা ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে বাজেট কমানো, কর্মী নিয়োগ ও ছাঁটাইয়ের অনিয়ম ও অন্যান্য সংস্কারের কড়া সমালোচনা করেন।
তবে ১৮২ জনের মধ্যে মাত্র ৩৬ জন তাদের নাম সই করেন। বাকিরা নেতিবাচক পরিণামের ভয়ে নাম গোপন রাখেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, যারা সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন তাদের সংখ্যা '৩০ জনের আশেপাশে'। তাদেরকে ওই সিদ্ধান্ত জানিয়ে ইমেইল পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যমটি।
ইমেইলে ওই কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে, তাদেরকে প্রশাসনিক ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে এবং এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে।
ওয়াশিংটন পোস্ট ইমেইলের বরাত দিয়ে জানায়, 'তাদেরকে আপাতত কোনো পেশাগত দায়িত্ব পালন না হলেও পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত চাকুরির সব ধরনের আর্থিক সুবিধা উপভোগ করতে থাকবেন।'
ফেমা'র কর্মকর্তা ভার্জিনিয়া কেইস সিএনএনকে জানান, তিনি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় 'বেতনসহ ছুটিতে' যাওয়ার বিষয়ে ইমেইল পেয়েছেন। তিনি বলেন, 'আমি হতাশ হলেও বিস্মিত হইনি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি, তারা সবাই বিষয়টি নিয়ে গর্বিত। এতে আমাদের চাকরির ওপর কি প্রভাব পড়বে, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। যা ঘটছে, তা জানার অধিকার জনগণের আছে। কারণ, এই ধারা চলতে থাকলে মানুষ দুর্দশায় পড়বে।'
কেইস বলেন, তিনি আরও অন্তত ছয় কর্মকর্তার কথা জানেন যারা একই ধরনের ইমেইল পেয়েছেন।
জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, তিনি কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বাসী নন। তিনি ফেমা বন্ধ করে দিয়ে প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে তাদের 'নিজেদের সমস্যা নিজেদেরকে সমাধান' করতে দিতে আগ্রহী।
তিনি এই দপ্তরের বিরুদ্ধে অদক্ষতার অভিযোগ আনেন। পাশাপাশি, তিনি দাবি করেন, রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণাধীন অঙ্গরাজ্যের বিরুদ্ধে এই দপ্তর বৈরি মনোভাব দেখায়। তবে এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ফেমার কর্মকর্তাদের পাঠানো খোলা চিঠিতে ২০০৫ সালের আগস্টে হ্যারিকেন ক্যাটরিনার সময় অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে বলা হয়, এই সংস্থার 'সংস্কারের' নাম করে আবারও একই ধরনের ভুলের পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে।
ওই দুর্যোগে কেন্দ্রীয় সরকারের নানা ভুল সিদ্ধান্তে বড় বিপর্যয় ঘটে। এক হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানির পাশাপাশি ১০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, ফেমার কোনো উদ্যোগে এক লাখ ডলারের বেশি প্রয়োজন পড়লে তা ব্যক্তিগত ভাবে নিরীক্ষা করবেন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সচিব ক্রিস্টি নোয়েম।
ফেমা কর্মকর্তাদের চিঠিতে দাবি করা হয়, এই বিধানের কারণে ২০২৫ সালের জুলাইতে টেক্সাসের কেরভিলে ত্রাণ উদ্যোগ চালাতে অন্তত ৭২ ঘণ্টা দেরি হয়েছে। যার ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।