সময়ের জনমাধ্যম

জাহাঙ্গীরের ঘাড়ে ঝুলছে চিরতরে বহিষ্কারের খড়গ

গাজীপুরের সাবেক মেয়র ও গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে আওয়ামী লীগ থেকে চিরতরে বহিস্কারের সুপারিশ করেছে দলটির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা। সম্প্রতি দলীয় সিদ্ধান্ত আমান্য করে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্তের সুপারিশ দলটির।

রোববার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম মুহূর্ত নিউজকে এই খবর নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সকালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরা। এতে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তাব করেন বাহাউদ্দিন নাছিম।

বারবার দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করায় তাকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সুপারিশ করেন তিনি। এসময় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যরাও এতে একমত পোষণ করেন। পরে সিদ্ধান্ত হয়, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনাকে জানাবেন। এসময় জাহাঙ্গীর আলম যাতে দলের কোন কর্মকাণ্ডে যুক্ত না হতে পারেন সেই সিদ্ধান্ত নেন দলটির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।

নাছিম জানান, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যেকোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় দলের কার্যনির্বাহী বৈঠকে। এখনই এ বৈঠক না হওয়ায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে সম্পাদকমণ্ডলীর সুপারিশ পাঠানো হবে।

বাহাউদ্দিন নাছিম আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। সম্পাদকমণ্ডলীর সুপারিশ দলীয় সভাপতির কাছে পাঠানো হবে। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে আসন্ন পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন নেতারা। বিশেষ করে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে জাহাঙ্গীরের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করার বিষয়টি সামনে আসে। নেতারা বলেন, জাহাঙ্গীর আলমকে এর আগেও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের নিয়ে কটূক্তি করার জন্য দল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে সাধারণ ক্ষমা চাওয়ায় তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু জাহাঙ্গীর আবার দলীয় সিদ্ধান্ত আমান্য করে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছিলেন। শুধু সে না তার মা জায়েদা খাতুনকে প্রার্থী করেছেন তিনি। নিজের মনোনয়ন বাতিল হওয়ার পরে মায়ের পক্ষে প্রচারণা করছেন জাহাঙ্গীর। সেখানে দলের বিপক্ষে কথা বলছেন তিনি। এ জন্য তাকে দল থেকে চিরতরে বহিষ্কারের সুপারিশ করেন তারা।

আগামী ২৫ মে অনুষ্ঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান। সেখানে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হন জাহাঙ্গীর আলম। একই সঙ্গে মা জাহেদা খাতুনকেও প্রার্থী করেন তিনি। ঋণ খেলাপির জামিনদার হওয়ায় জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিল হয়। পরে আপিলেও মনোনয়ন ফিরে পাননি।

এদিকে, বৈঠকে আওয়ামী লীগের নেতাদের সিটি করপোরেশনের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধ প্রচারের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সম্পাদকমন্ডলীর বৈঠকে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ডা. দীপু মণি, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাশ, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, উপ প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল আউয়াল শামীম, উপ দপ্তর বিষয়ক সম্পাদক অ্যাড. সায়েম খান, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজী উপস্থিত ছিলেন।