জামায়াতে ইসলামী ‘নির্ভরযোগ্য মিত্র না’ বলে মন্তব্য সামান্তার, এনসিপির ফাটল প্রকাশ্যে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ‘নির্ভরযোগ্য মিত্র না’ এমন মন্তব্য করে দলটির কাছে থেকে সহযোগিতা নেওয়া বা তাদের সঙ্গে সমাঝোতায় যাওয়ার জন্য এনসিপিকে ‘কঠিন মূল্য চুকাতে হবে’ বলে জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন। রোববার সকালে ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন সামান্তা। সামান্তা এনসিপির সঙ্গে নিজের অবস্থানের সামঞ্জস্যতা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে জামায়াতের বিষয়ে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের অতীত অবস্থানও স্মরণ করিয়ে দেন।
এই প্রসঙ্গে সামান্তা তার পোস্টে লিখেছেন, “সম্প্রতি রাজনৈতিক জোট প্রসংগে জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল নেতারা মন্তব্য করেছিলেন জামায়াতের জুলাইয়ের স্পিরিট, বাংলাদেশের নিয়ে পরিকল্পনা নিয়ে একমত হলে জামায়াতের সাথে জোট করতে আসতে পারে যে কোন দল। জাতীয় নাগরিক পার্টির এত দিনের অবস্থান অনুযায়ী তার মূলনীতি, রাষ্ট্রকল্প জামায়াত থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। বিচার, সংস্কার ও গণপরিষদ নির্বাচন তথা সেকেন্ড রিপাবলিককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দল এনসিপি। ফলে এই তিনটি বিষয়ে অভিন্ন অবস্থান যেকোনো রাজনৈতিক মিত্রতার পূর্বশর্ত।“
সামান্তা বলেন, “আমার বর্তমান অবস্থান পার্টির গত দেড় বছরের অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। নিম্নকক্ষে পিআর আওয়াজ তুলে সংস্কারকে ব্যাহত করায় লিপ্ত হয়েছিল জামায়াত। ফলত এনসিপির আহবায়ক বলেছিলেন ‘যারা সংস্কারের পক্ষে নয় তাদের সাথে জোটও সম্ভব নয়।’ তাই জুলাই পদযাত্রার পর থেকে ‘৩০০’ আসনে একক প্রার্থী দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয় আহবায়কসহ একাধিক বরাতে এবং স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করবে এনসিপি- এই মর্মে সারা দেশ থেকে প্রার্থীদের আহবান করা হয়।’’
“জামায়াতের সাথে জোট করার সমস্যাসমূহ তুলে ধরা মানেই বিএনপির পক্ষে অবস্থান বোঝায় না। বরং বিভিন্ন বিষয়ে এতদিন ধরে প্রকাশিত ও নানান মহলে প্রশংসিত এনসিপির অবস্থান আমি সঠিক মনে করি ও নিজেকে এই আদর্শের সৈনিক মনে করি। বিএনপি-জামায়াতের যেকোনটির সাথে জোট এনসিপির সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক পলিসি থেকে সরে গিয়ে তৈরি হচ্ছে।” লেখেন সামান্তা।
সামান্তা তার পোস্টের সঙ্গে দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের একটি পূর্বের পোস্টও শেয়ার করেছেন। সেখানে সংসদের নিম্নকক্ষে ভোটের আনুপাতিকহারে প্রতিনিধি নির্বাচনের আন্দোলনকে ‘রাজনৈতিক প্রতারণা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
গত ২৫ ডিসেম্বর জামায়াতের সঙ্গে এনসিপি জোট ‘বাঁধার’ খবর চাউর হয়। ওইদিন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সাবেক আহ্বায়ক আব্দুল কাদের ফেইসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে আলোচনাটি সামনে আনেন। কাদের লিখেছিলেন, “তারুণ্যের রাজনীতির কবর রচিত হতে যাচ্ছে। এনসিপি অবশেষে জামাতের সাথেই সরাসরি জোট বাঁধতেছে। সারাদেশে মানুষের, নেতাকর্মীদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়ে গুটিকয়েক নেতার স্বার্থ হাসিল করতেই এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামীকাল এই জোটের ঘোষণা আসতে পারে।”
এরপর জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলীয় জোটের সঙ্গে এনসিপির আসন সমঝোতা বা জোট গঠনের উদ্যোগ নিয়ে আপত্তি আসে দলটির ৩০ জন কেন্দ্রীয় নেতার তরফ থেকে। ‘আপত্তির’ কথা জানিয়ে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে শনিবার স্মারকলিপি দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ৩০ কেন্দ্রীয় নেতার একজন। এর মধ্যে শনিবার আতে এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা। একইসঙ্গে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৯ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা পর থেকেই শাপলা কলি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছে এনসিপি। ইতোমধ্যে তারা শতাধিক আসনে প্রার্থীও ঘোষণা করেছে। এছাড়া গেল ৭ ডিসেম্বর এনসিপির নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে তিন দলের ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’। এ জোটের বাকি দুই দল হল এবি পার্টি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। সেই জোট গঠনের তিন সপ্তাহ না যেতেই জামায়াতের সঙ্গে দলটির আসন নিয়ে দর কষাকষি হওয়ার বিষয় সামনে এল।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের সাংবাদিকদের বলেন, “এনসিপির সঙ্গে দীর্ঘ দিন ধরেই জোট গঠনের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এখন দেখা যাক কি হয়, জোট হলে আপনাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেওয়া হবে।”
ফেইসবুক পোস্টে জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে নির্বাচনি জোট হওয়ার আভাস দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রিফাত রশিদ। তিনি বলেন, ৩০ আসনে এনসিপি জামায়াতের সঙ্গে জোটে গেলে ব্যাপারটা ‘আত্মঘাতী’ হবে।

















