সময়ের জনমাধ্যম

জাবিতে ছাত্রলীগের হামলায় দুই সাংবাদিক আহত

পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় দুই সাংবাদিকের ওপর অস্ত্র দিয়ে হামলা করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।বুধবার রাত আটটা’র দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার শিকার হয়েছেন ডিবিসি নিউজের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আব্দু্লাহ আল মামুন, অপরজন দ্য বাংলাদেশ টুডেটজ এর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জুবায়ের আহমেদ। প্রাথমিক চিকিৎসার পর দুইজনই সুস্থ আছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে থেকে লাঠি, ইটপাটকেল, ভাঙা কাঁচের বোতল, রড, রামদা, চুরিসহ দেশীয় ধারালো অস্ত্রসস্ত্র একটি মহড়া নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের দিকে যাচ্ছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এসে তাদের বাধা দেন। পরে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ঘন্টাব্যাপী বাকবিতন্ডা চলে। একপর্যায়ে মীর মোশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত দুই সাংবাদিকের ওপর হামলা চালায়।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেনিন মাহবুব, সহ-সভাপতি হাসান মাহমুদ ফরিদ ও সজিবের ইন্ধনে সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে যান অন্য নেতাকর্মীরা।

মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দাবি, বুধবার সন্ধ্যায় বটতলায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র আহমেদ গালিবকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের একদল শিক্ষার্থী মারধর করেন। এর জের ধরেই তারা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের দিকে যাচ্ছিলেন।

এর আগে সাভারের একটি রেস্টুরেন্টে বসাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে গত রোববার (১৯ মার্চ) রাত দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ-জেইউ) ৪৭তম ব্যাচের ও রবীন্দ্রনাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমানকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আহমেদ গালিব, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের তানভীর ইসলাম, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সাব্বির হাসান সাগর ও খালিদ হাসানসহ অজ্ঞাত ৪০ জনের বিরুদ্ধে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মাহফুজুর। এ ঘটনায় অভিযুক্তরা এবং ভুক্তভোগী ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

এরপর বুধবার সন্ধ্যায় পাল্টা মারধরের জেরে রাতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ হল অভিমুখে বের হন মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাদের সঙ্গে হলটির নবীন শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক নিয়ে যাওয়া হয় বলেও অভিযোগ উঠেছে।

বটতলায় প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অবস্থান করছিলেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে মীর মশাররফ হোসেন হলের উত্তেজিত নেতাকর্মীরা ফিরে যাওয়ার পর সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন উপস্থিত হন।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, আমি ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলাম। তাই ঘটনাস্থলে আসতে দেরি হয়েছে। ছাত্রলীগের কেউ দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ক্যাম্পাসে দেশীয় অস্ত্র থাকলে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তো একরকম শঙ্কা তৈরি হয়। আমরা এসবের বিরুদ্ধে রয়েছি। এক্ষেত্রে হল থেকে এসব নির্মূলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, আজকের ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত। আমরা এই ধরনের ঘটনাগুলো নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণে রেখে তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নিই। এক্ষেত্রেও সেটিই করা হবে। এর বাইরে কোন ধরনের অভিযোগ পেলে সেগুলোও খতিয়ে দেখা হবে।