অগণিত মানুষের শোক, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় চিরবিদায় নিলেন আপসহীন নেত্রী, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বুধবার বেলা ৩টা ২ মিনিটে জাতীয় সংসদের সামনে তাঁর জানাজাস্থল হয়ে উঠে জনসমুদ্র।
জাতীয় সংসদ ভবনের ভেতরের মাঠ, বাইরের অংশ এবং পুরো মানিক মিয়া অ্যাভেনিউ ছাড়িয়ে আশপাশের সব সড়ক, অলিগলি থেকে অজস্র মানুষ জানাজায় অংশ নেন। জানাজায় অংশগ্রহণের জন্য নারীদের জন্য রাখা হয় বিশেষ ব্যবস্থা।
জানাজা পড়ান বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব আবদুল মালেক। আর সঞ্চালনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
এর আগে পরিবারের পক্ষ থেকে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান তার মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
তারেক রহমান বলেন, “আমি মরহুমা বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান। আমি আজকে এখানে উপস্থিত সকল ভাইয়েরা এবং বোনেরা-যারা উপস্থিত আছেন, মরহুমা বেগম খালেদা জিয়া জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় যদি আপনাদের কারো কাছ থেকে কোনো ঋণ নিয়ে থাকেন, দয়া করে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। আমি সেটি পরিশোধের ব্যবস্থা করবো ইনশাআল্লাহ।
“একই সাথে উনি জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় উনার কোনো ব্যবহারে, উনার কোনো কথায় যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, তাহলে মরহুমার পক্ষ থেকে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। দোয়া করবেন। আল্লাহ তাআলা যাতে উনাকে বেহেশত দান করেন।”
জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বাম পাশে দাঁড়ান তারেক রহমান, তারপরে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এবং তারপরে দাঁড়ান নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদার।
আর সরকারপ্রধানের ডান পাশে প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, তারপরে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান এবং তারপরে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি তার সরকারের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান, ফাওজুল কবির খান, আ ফ ম খালিদ হোসেন, আলী ইমাম মজুমদার, সি আর আবরার, এম সাখাওয়াত হোসেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকেও জানাজায় দেখা গেছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিএনপির সর্বস্তরের নেতারকর্মীরা জানাজায় শরিক হোন। জানাজায় দেখা গেছে কবি ও তাত্ত্বিক ফরহাদ মজহারকে।
রাজনীতিকদের মধ্যে জামায়াত ইসলামীর মিয়া গোলাম পরওয়ার, শামীম সাঈদী, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনসিপির নাহিদ ইসলাম ও হাসনাত আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মামুনুল হক উপস্থিত ছিলেন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং গণঅধিকার পরিষদের নুরুল হক নুরকে দেখা গেছে। ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের আহমাদুল্লাহও বিএনপি নেত্রীর জানাজায় অংশ নেন।
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাবিক, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডি এন ধুঙ্গেল, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির উচ্চ শিক্ষা, শ্রম ও দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী আলি হায়দার আহমেদ, নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বালা নন্দা শর্মা, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিজিতা হেরাথ।
চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন মিশনের প্রধানরাও তাদের দেশের পক্ষে খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে শেষ যাত্রায় অংশ নিয়েছেন।
মঙ্গলবার ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, ‘আপসহীন নেত্রী’ খালেদা জিয়া। তাঁর মৃত্যুতে দেশে তিনদিনের রাষ্ট্রীয় শোক চলছে, বুধবার ঘোষণা করা হয়েছে সাধারণ ছুটি।
বুধবার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়ার কফিন নেওয়া হয় গুলশানে তার ছেলে তারেক রহমানের বাড়িতে। পরে জাতীয় পতাকা শোভিত লাশবাহী গাড়ি বুধবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে সংসদ ভবনের সামনে পৌঁছায়।
গাড়িবহরে একটি বাসে করে সেখানে পৌঁছান খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা। এই মানিক মিয়া অ্যাভেনিউতেই ১৯৮১ সালের ২ জুন তার স্বামী, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জানাজা হয়েছিল।