গোপন বৈঠকের অভিযোগে ২২ আ.লীগ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার, সেনা হেফাজতে মেজর সাদিক


রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিকটস্থ কনভেনশন সেন্টারে ‘গোপন বৈঠক’ করার অভিযোগে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ২২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একই বৈঠকে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মেজর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে সেনাবাহিনী। আজ বৃহস্পতিবার সেনা সদর দপ্তরের এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।
এই ঘটনায় ভাটারা থানায় দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে, গত ৮ জুলাই কে বি কনভেনশন সেন্টারে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা মিলিত হয়ে ৩০০-৪০০ জনের একটি গোপন সভা করেন। সেখানে তারা সরকারবিরোধী স্লোগান দেন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের অপেক্ষায় থাকার পরিকল্পনা করেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল সারা দেশ থেকে লোকজন জড়ো করে ঢাকার শাহবাগ মোড় দখল করা, যাতে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করা যায়।
এই মামলার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ডিএমপির উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান নিশ্চিত করেছেন যে, এখন পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তারা বর্তমানে কারাগারে আছেন। ডিবি সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা ‘প্রিয় স্বদেশ’, ‘এফ ৭১ গেরিলা’, ‘বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম’, ‘প্রজন্ম ৭১’, ‘শেখ হাসিনা’-সহ বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের সদস্য। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, এই গোপন বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্র। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পুলিশ গত ১২ জুলাই যুবলীগ নেতা সোহেল রানা এবং আওয়ামী লীগ নেত্রী শামীমা নাসরিন (শম্পা)-কে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে ১৩ জুলাই ভাটারা থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
সেনা সদরের প্রেস ব্রিফিংয়ে কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘মেজর সাদিকের বিষয়ে আমরা অবগত। তার বিষয়ে তদন্ত চলমান। তদন্ত শেষে এ বিষয়ে বলতে পারব।’ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা আরও যোগ করেন, ঘটনা জানার পর থেকেই মেজর সাদিক সেনাবাহিনীর হেফাজতে আছেন। তদন্তে যদি তার দোষ প্রমাণিত হয়, তবে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত সোহেল রানা ও শামীমা নাসরিন মেজর সাদিকের নির্দেশের কথা জানিয়েছেন। তার নির্দেশেই তৃণমূল কর্মীদের সংগঠিত করে নাশকতার প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কনভেনশন সেন্টারটি ভাড়া করা হয়েছিল। ডিবি সূত্র আরও জানায়, এই বৈঠকের ব্যবস্থাপক মুজাহিদকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যিনি সিসি ক্যামেরা ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধ রেখেছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, এর আগে এমন আরও চারটি প্রশিক্ষণ হয়েছিল এবং সবগুলোর ভিডিও ফুটেজ নষ্ট করা হয়েছে।
ডিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে গ্রেপ্তারকৃতদের সম্পৃক্ততা যাচাই করা হচ্ছে এবং এই ষড়যন্ত্রে জড়িত সব ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।