গাজায় পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ উন্মোচন করছে ইসরায়েলের মিথ্যাচার


নির্বাক শিশুদের শূন্য দৃষ্টি, অভুক্ত মানুষদের অপেক্ষা, আজকের গাজার চিত্র এমনই। ইসরায়েল প্রায়ই দাবি করেছে— হামাস জাতিসংঘের ত্রাণ লুট করছে। এই অভিযোগের দোহায় দিয়ে তারা গাজায় খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ সীমিত করেছে। কিন্তু এবার ইসরায়েলের ভেতর থেকেই বের হচ্ছে সেই প্রপাগান্ডার আসল চেহারা।
সম্প্রতি দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দুই সিনিয়র কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন— হামাস জাতিসংঘের ত্রাণ লুট করছে— এমন কোনো বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ নেই। এমনকি তারা বলেছেন—জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা, যেটিকে এতদিন অবিশ্বস্ত বলে প্রচার করা হচ্ছিল, তা আসলে গাজার জনগণের জন্য কার্যকর এবং জরুরি সহায়তা প্রদান করছে।
একজন কর্মকর্তা বলেন— ‘জাতিসংঘের সহায়তা থেকে হামাস নিয়মিত কিছু আত্মসাৎ করছে— এমন কোন তথ্য তাদের হাতে নেই। এই স্বীকারোক্তি শুধুই তথ্য নয়, বরং ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের এক প্রোপাগান্ডার বিপরীতে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ। এসব ভিত্তিহীন অভিযোগের কারণে মাসের পর মাস জাতিসংঘ ও অন্যান্য মানবিক সংস্থাগুলোর সুনাম ক্ষুণ্ণ করেছে।
জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়ক জর্জিওস পেট্রোপুলোস বলেন—’ জাতিসংঘ এবং অন্য সংস্থাগুলো হামাসকে সহায়তা করার মিথ্যা অভিযোগে একটানা কুৎসা রটনার শিকার হয়েছে।’এই অভিযোগের একমাত্র লক্ষ্য ছিল— ত্রাণ প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করা এবং আন্তর্জাতিক সহানুভূতি দূরে সরানো। এই অভিযোগ ভিত্তিহীন, তা আরও স্পষ্ট হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব সরকারি তদন্তে।
USAID পরিচালিত অভ্যন্তরীণ মূল্যায়নে দেখা গেছে— ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত ১৫৬টি ঘটনার একটিতেও হামাসের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। অবাক করা তথ্য হলো, এই ১৫৬ ঘটনার মধ্যে ৪৪টি ঘটনার জন্য ইসরায়েলি বাহিনী নিজেরাই দায়ী, কখনো বোমা হামলা, কখনো তাদের নির্ধারিত রুটে ত্রাণবাহী গাড়ি লুটপাট হওয়া।
এদিকে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত Gaza Humanitarian Foundation এর বিতর্কিত সহায়তা ব্যবস্থাপনায় প্রায় ১,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, তাদের অনেকেই মারা গেছেন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলী সেনাদের গুলিতে। জাতিসংঘ জানিয়েছে— ২ মার্চের পর থেকে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা আর খাদ্য সরবরাহ করতে পারছে না। এর ফলে অন্তত ১১৫ জন মানুষ অনাহারে মারা গেছেন, যাদের মধ্যে ৮০ জন শিশু।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি আগ্রাসনে ৫৯,০০০-এর বেশি মানুষ নিহত এবং ১ লাখ ৪২ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে। যখন ইসরায়েলের ভেতর থেকেই তথ্য আসছে ‘হামাস ত্রাণ লুট করেনি’— তখন অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এই খাদ্য সংকট কি শুধুই যুদ্ধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া? নাকি এটি ম্যাটিকুলাসলি ডিজাইন মানবিক দুর্যোগ? যে ডিজাইনের বলি হচ্ছে- শিশু, বৃদ্ধসহ নানা বয়সের মানুষ।