গাজায় নিহত সাহসী কণ্ঠস্বর: আল জাজিরা সাংবাদিক আনাস আল শরীফের শেষ চিঠি


গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ইসরায়েলি হামলার খবর পৌঁছে দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন উৎসর্গ করলেন আল জাজিরা আরবির তরুণ সাংবাদিক আনাস আল শরীফ। রোববার আল (১০ আগস্ট) শিফা হাসপাতালের মূল ফটকের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় প্রাণ হারান সাতজন; এর মধ্যে পাঁচজন ছিলেন আল জাজিরার সংবাদকর্মী, আর তাঁদের মধ্যেই ছিলেন মাত্র ২৮ বছর বয়সী আনাস।
দীর্ঘদিন ধরে গাজার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে খবর পাঠাতেন তিনি। বোমাবর্ষণ, ধ্বংসস্তূপ আর নিহতদের লাশের মাঝেই দাঁড়িয়ে ক্যামেরায় তুলে ধরতেন যুদ্ধের নির্মম চিত্র। তবে গত ৬ এপ্রিল তিনি নিজের জন্য লিখে রেখেছিলেন একটি ‘শেষ বার্তা’, যা মৃত্যুর পর প্রকাশ পেয়েছে।
সেখানে আনাস লিখেছেন, ‘তবু আমি কখনো দ্বিধা করিনি সত্য যেমন আছে, ঠিক তেমনই, বিন্দুমাত্র বিকৃতি বা ভ্রান্তি ছাড়াই তুলে ধরতে। আমার একমাত্র আশা ছিল, আল্লাহ যেন সাক্ষী থাকেন তাদের প্রতি, যারা নীরব থেকেছেন, যারা আমাদের হত্যাকে মেনে নিয়েছেন, আর যারা আমাদের শ্বাস পর্যন্ত রুদ্ধ করেছেন।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমাদের শিশু ও নারীদের ক্ষতবিক্ষত দেহও তাদের হৃদয়কে নড়াতে পারেনি, কিংবা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের জনগণের ওপর চলা হত্যাযজ্ঞ থামাতে পারেনি।’
গাজায় মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েও নিজের পরিবারকে ভোলেননি এই সাংবাদিক। স্ত্রী বায়ান, ছেলে সালাহ ও মেয়ে শামের কথা উল্লেখ করে তিনি লিখেছিলেন, হয়তো সন্তানদের বড় হতে দেখা হবে না, আর সেটিই তাঁর একান্ত কষ্টের বিষয়।
বার্তার শেষ অংশে আনাস লিখেছেন, ‘আমি যদি মারা যাই, তারপরও আমি আমার আদর্শে অটল থাকব। আল্লাহর সঙ্গে আমার দেখা হচ্ছে। তিনি চিরস্থায়ী। আপনার গাজাকে ভুলে যাবেন না, আর আপনাদের প্রার্থনায় আমাকে ভুলে যাবেন না।’