গাজায় দুর্ভিক্ষ বাড়ছেই, ইসরায়েলকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কঠোর হুঁশিয়ারি


গাজার অবরুদ্ধ জনপদে খাদ্য সংকট ও অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা ১০১ ছাড়িয়ে যাওয়ায় ইসরায়েলকে সতর্ক করল ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কায়া কাল্লাস মঙ্গলবার এক পোস্টে ইসরায়েলের প্রতি কড়া ভাষায় হুঁশিয়ারি দেন, তিনি বলেছেন,
‘ইসরায়েল যদি অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে সব ধরনের পদক্ষেপ বিবেচনায় নেওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানবিক সহায়তা নিতে যাওয়া নিরীহ মানুষদের হত্যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’ ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সারকে এক ফোনালাপে তিনি সতর্ক করে বলেন, খাদ্যবণ্টন কেন্দ্রে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।
ইইউ এর আগেও গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। তখন ইসরায়েল জানিয়েছিল, সহায়তা ট্রাক, প্রবেশপথ ও বণ্টনকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হবে। তবে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোর দাবি—তথ্য অনুযায়ী, বাস্তবে এই প্রবাহ বাড়েনি।
যুক্তরাষ্ট্রের দূত ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা
এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ যুদ্ধবিরতি আলোচনায় অংশ নিতে ইউরোপে যাচ্ছেন। তিনি রোমে কাতারি মধ্যস্থতাকারী ও ইসরায়েলের কৌশল বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমারের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম অ্যাক্সিওস।
পর্যাপ্ত অগ্রগতি হলে উইটকফ এরপর কাতারের রাজধানী দোহায় যাবেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র জানান, ‘আশা করছি যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব ও মানবিক করিডোর গঠনের বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি হবে।’
ইসরায়েলি হামলায় ত্রাণ নেওয়ার সময় নিহত ১,০০০’র বেশি
ইসরায়েল মার্চে গাজার প্রবেশপথ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়। মে মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় গঠিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) সীমিত পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহ শুরু করে, যা জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
এই জিএইচএফ-এর পরিচালিত কেন্দ্রগুলোর আশপাশে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে জাতিসংঘের দাবি। তবে ইসরায়েল ও জিএইচএফ উভয়ই এই পরিসংখ্যানকে “অতিরঞ্জিত ও ভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
মঙ্গলবার একদিনেই গাজায় অনাহারে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের, যাদের মধ্যে চারজন শিশু। মোট মৃতের ৮০ জনই শিশু।
দোহা বলছে—‘ফিলিস্তিনিদের মানুষ ভাবেই না ইসরায়েল’
কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মাস ধরেই যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা করছে। প্রস্তাবটি হলো—হামাস কিছু ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে, ইসরায়েল কিছু ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে এবং মানবিক সহায়তার পথ খুলে দেবে। তবে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি এখনও মূল বাধা।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন,
‘ইসরায়েল শুধু গাজায় নয়, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন, এমনকি ইরানেও আক্রমণ চালিয়ে পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা বিপন্ন করছে। তারা ফিলিস্তিনিদের মানুষ হিসেবেই দেখে না।’
কাতারি প্রতিনিধি বলেন, ইরান-ইসরায়েল সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির যে কূটনৈতিক গতিপথ তৈরি হয়েছে, সেটিকে কাজে লাগিয়ে গাজা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে চায় তারা। তবে আন্তর্জাতিক সমাজ—বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র—ইসরায়েলের ওপর পর্যাপ্ত চাপ না দিলে যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।