গাজায় আল জাজিরার পাঁচ কর্মীর দাফন সম্পন্ন


গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত আল জাজিরার পাঁচ কর্মীর জানাজায় অংশ নিতে সোমবার (১১ আগস্ট) গাজা সিটিতে শত শত ফিলিস্তিনি জড়ো হন। আল-শিফা হাসপাতালের বাইরে এই হামলায় এই সাংবাদিকরা নিহত হয়েছিলেন। তাদের সহকর্মী, বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা শোকে মুহ্যমান হয়ে শেষ বিদায় জানান।
মর্মান্তিক এই ঘটনার পর গাজার শেখ রাধওয়ান গোরস্থানে তাদের দাফন সম্পন্ন হয়। জানাজার মিছিলে শোকাহত মানুষের হাতে ছিল নিহত সাংবাদিকদের ‘প্রেস’ লেখা বর্ম ও ফিলিস্তিনের পতাকা। এ সময় স্লোগানে স্লোগানে তারা এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানান।
গত রোববার (১০ আগস্ট) গভীর রাতে চালানো এই বিমান হামলায় মোট সাতজন নিহত হন। এর মধ্যে ছিলেন আল জাজিরার বিশিষ্ট সাংবাদিক আনাস আল-শরিফ ও মোহাম্মদ কোরাইকেহ। এছাড়া, ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিম জাহের, মোমেন আলিওয়া এবং মোহাম্মদ নওফলও নিহত হন। নিহতদের তালিকায় একজন ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক, মোহাম্মদ আল-খালিদি-ও ছিলেন। রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ) জানিয়েছে, হামলায় আরও তিন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।
আল জাজিরা নেটওয়ার্ক এই ঘটনাকে ইসরায়েলি বাহিনীর ‘সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে আখ্যায়িত করেছে। তাদের দাবি, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জেনে-শুনে সাংবাদিকদের অবস্থান লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর একটি প্রকাশ্য ও পূর্বপরিকল্পিত আক্রমণ।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) এই হত্যাকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক সারা কুদাহ বলেন, ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই ইসরায়েলের সাংবাদিকদের জঙ্গি হিসেবে আখ্যায়িত করার প্রবণতা তাদের উদ্দেশ্য এবং সংবাদপত্রের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তোলে। এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।’
আরএসএফ এই হামলাকে ‘ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর স্বীকার করা হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। সংস্থাটি আরও সতর্ক করে বলেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি দৃঢ় পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও অনেক সংবাদকর্মী এমন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হবেন। তারা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছে।
আল-শরিফের বাবাও এক বছর আগে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছিলেন। এই হত্যাকাণ্ড এমন এক সময়ে ঘটল, যখন ইসরায়েল গাজা দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এই পরিকল্পনা অনুসারে গাজা সিটি দখল করে প্রায় এক মিলিয়ন ফিলিস্তিনিকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে দখলদার দেশটি।