সময়ের জনমাধ্যম

গরমে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগী, সতর্ক থাকার পরামর্শ

মাত্রাতিরিক্ত গরমে প্রতি বছরই দেশে ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা যায়। দেশজুড়ে গত কয়েকদিনের দাবদাহের কারণে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর ভীড়। রাজধানীতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর’বি) কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বর্তমানে দৈনিক সাড়ে ৫শ থেকে ৬শ জন পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। সাধারণ সময়ে এই সংখ্যা থাকে ৩শ থেকে সাড়ে ৩শ’র মধ্যে। হাসপাতালটির পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে জানা গেছে, প্রতি বছর বর্ষার আগে ও পরে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।

আইসিডিডিআর,বি’র সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ডা. মো. ইকবাল হোসেন জানিয়েছেন, তীব্র গরমে মানুষ যেখানে সেখানে তৃষ্ণা মেটাতে পানি পান করে। সব জায়গায় নিরাপদ পানিও পাওয়া যায় না। ফলে এ সময়ে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

তিনি বলেন, ডায়রিয়া আক্রান্ত হলে শরীর থেকে লবণ ও পানি বের হয়ে যায়। যতবার পাতলা পায়খানা হবে, ততবার একটি করে খাবার স্যালাইন খেতে হবে। তাহলেই এভাবে চলতে থাকলে এমনিতেই রোগী সুস্থ হয়ে যাবে, তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসারও প্রয়োজন হবে না। রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ হলে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও দেশের প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, কিছুদিন আগে থেকে সারাদেশে তীব্র গরম পড়েছে। এতে মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তীব্র গরমের কারণে সবচেয়ে বেশি হয় ডিহাইড্রেশন। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হয় যখন তীব্র গরমে মানুষ বাইরে দীর্ঘক্ষণ কাজ করে, তখন ডিহাইড্রেশনের একটা স্টেজে শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অকার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে উচ্চ তাপমাত্রাতেও শরীর ঘামে না। এমনকি একটি পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যায় মানুষ। যেটিকে আমরা মেডিক্যাল সায়েন্সের ভাষায় হিটস্ট্রোক বলি।

তিনি আরও বলেন, শ্রমজীবী মানুষেরা বাইরে কাজ করেন, বাধ্য হয়েই অনেক সময় তারা রাস্তাঘাটে শরবত ও পানি পান করেন। ফলে তাদের ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা যায়। এছাড়াও এই সময়ে টাইফয়েড, প্যারাটাইফয়েড, জন্ডিসের রোগীও প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি এই সময়ে যারা বিভিন্ন শ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত, তাদেরও শ্বাসকষ্ট, কাশিসহ হাঁপানি দেখা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, নিয়মিত যারা বাইরে কাজ করেন। তাদেরকে দুই ঘণ্টা পরপর ছায়ায় বসে ১৫-২০ মিনিট বিশ্রাম নিতে হবে। নাহলে তারা হিটস্ট্রোকের শিকার হতে পারেন।  প্রচণ্ড গরমের মধ্যে প্রচুর বিশুদ্ধ পানি, লবণ মিশ্রিত পানি, ওরস্যালাইন, ডাব খাওয়ার পরামর্শ দেন ডাক্তার আব্দুল্লাহ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, গরমে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আসছে। তবে পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক রয়েছে।