সময়ের জনমাধ্যম

খাদে পড়েও এমন মহাকাব্য রচনা করা যায়!

আফগানিস্তানের দেয়া ২৯২ রান তাড়া করতে নেমে ৯১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছে অজিরা মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডয়ামে উপস্থিত দর্শকরা তখন হয়তো আফসোসেই পুড়ছিলেন। প্রাণহীন ম্যাচে এভাবে অজিরা এভাবে ধরাশায়ী হবে এমনটা কল্পনারও অতীত তা বলাই বাহুল্য। অনেকেই যখন স্টেডিয়াম থেকে বের হয়ে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তখনো যে ব্যাট হাতে এক মহাকাব্য নিয়ে অপেক্ষা করছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল তাই বা কে জানতো। কিন্তু দিনটা যে ছিল ম্যাক্সওয়েলের, করলেন অসাধ্যকে সাধন। এমন ধ্বংসস্তূপ থেকে একাই টেনে তুললেন অজিদের। গুরুতর চোট নিয়ে খেললেন ১২৮ বলে ক্যারিয়ার সেরা ২০১ রানের অপরাজিত ইনিংস।

ওয়াংখেড়ের ব্যাটিং স্বর্গে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে ৩৮ রানে রহমানউল্লাহ গুরবাজকে হারায় আফগানিস্তান। এরপর রহমত শাহকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৮৩ রানের জুটি গড়েন ইব্রাহিম। রহমত ৩০ রানে ফিরে গেলে হাশমতউল্লাহর সঙ্গে রানের চাকা সচল রাখেন তিনি। ২৬ রানে আফগান অধিনায়ক মিচেল স্টার্কের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে গেলে ৫২ রানের জুটি ভাঙে। এরপর দ্রুত আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও মোহাম্মদ নবী সাজঘরে ফিরলে চাপে পড়ে আফগানরা।

চাপের মুখে রশিদ খানকে নিয়ে ২৯ বলে ৫৮ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ভালভাবেই বিপদ সামাল দেন ইব্রাহিম জাদরান। ইব্রাহিমকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে ১৮ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ৩৫ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন রশিদ খান। যার সুবাদে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রানের পুঁজি পায় আফগানরা। ১৪৩ বলে ১২৯ রান করে অপরাজিত থাকেন আফগান ওপেনার।

৯ ওভার বল করে ৩৯ রানে জশ হ্যাজেলউডের শিকার ২ উইকেট। মিচেল স্টার্ক, অ্যাডাম জাম্পা ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল শিকার করেন একটি করে উইকেট।

২৯২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুরুতেই ট্রাভিস হেডকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। এরপর তিনে নেমে মিচেল মার্শ ঝড়ো করলেও ১১ বলে ২৪ রান করে নাভিন উল হকের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরেন। ব্যাট হাতে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ডেভিড ওয়ার্নারও। মাত্র ১৮ রান করে সাজঘরে ফিরেন অজি ওপেনার। মিডল অর্ডারে লাবুশানে ও জস ইংলিশও সুবিধা করতে পারেননি, বিদায় নেন দ্রুতই।

এরপর মার্কাস স্টয়নিস ও মিচেল স্টার্ক দুই অঙ্ক ছোঁয়ার আগেই বিদায় নিলে মহাবিপর্যয়ে পড়ে অজিরা। পরের গল্পটা কেবলই ম্যাক্সওয়েলের। অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে সঙ্গী করে জন্ম দিয়েছেন এক মহাকাব্যের। ৫১ বলে ফিফটি পূর্ণ করা এই ব্যাটার ৭৬ বলে পৌঁছান তিন অঙ্কের ঘরে। শতক হাঁকিয়েই পড়েন ইনজুরিতে। পা যেন তার চলছিলোইনা। এক পর্যায়েতো দৌড়ে রান নিতেও অক্ষম হয়ে পড়েন বিধ্বংসী এই ব্যাটার।

কিন্তু ইনজুরিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বাউন্ডারির উপর নির্ভর করেই লড়তে থাকেন তিনি। দেড়শ পূর্ণ করেন ১০৪ বলে। তারপরও থামেননি, ব্যাট চালিয়ে গড়েন রেকর্ড। ৪৭তম ওভারে এসে আরও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। মুজিবের করা ওভারটির প্রথম বলে রান করতে না পারলেও দ্বিতীয় বলে হাঁকান ছক্কা। পরের বলেও একই কাজ করেন তিনি। চতুর্থ বলে চার রান নেওয়ার পর পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ডাবল সেঞ্চুরি করার পাশাপাশি অবিশ্বাস্য এক জয়ের আনন্দে ভাসান দলকে। পার্শ্বচরিত্র হয়ে অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ৬৮ বলে ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন।

আফগানদের হয়ে দুইটি করে উইকেট শিকার করেন রশিদ খান, নাভিন উল হক ও আজমতউল্লাহ ওমরজাই।

১২৮ বলে অপরাজিত ২০১ রান এবং ৫৭ রানে এক উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা অজি মহাকাব্যের নায়ক গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।

Reendex

Must see news