গেল জুনের শুরুতে ভারতের আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১ ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়লে প্রাণ হারান ২৭০ জনের বেশি যাত্রী। এই ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়েছিল বিশ্ব। সেই দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতের এয়ার অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো।
প্রতিবেদন বলছে, বিমানটির ইঞ্জিন কিংবা প্রযুক্তিগত যন্ত্রাংশে কোন বড় ধরনের ত্রুটি পাওয়া যায়নি। বরং তদন্তকারীদের দৃষ্টি আটকেছে দুই পাইলটের উপর। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ—যা সাধারণত বিমানের ইঞ্জিন চালু বা বন্ধ করতে ব্যবহৃত হয়, সেটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই ‘কাট-অফ’অবস্থায় ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে, দুই ইঞ্জিনই একসাথে থ্রাস্ট হারিয়ে ফেলে। বিমানটি তখন মাত্র এক মিনিটের মতো আকাশে ছিল।
ককপিট ভয়েস রেকর্ডার থেকে জানা গেছে, প্রধান পাইলট কো-পাইলটকে কাট অফের কারণ জিজ্ঞেস করেন। কো-পাইলট জানান, তিনি করেননি। তখনই দ্রুত সুইচ সচল করা হয়। ইঞ্জিন আবার চালু হলেও, পূর্ণ থ্রাস্টে ফিরতে সময় লেগে যায়। মাঝের সময়টুকুর বিলম্বেই ঘটে ভয়ানক বিপর্যয়।
এই ফুয়েল সুইচগুলো এত সহজে চালু বা বন্ধ হওয়ার কথা নয়। এগুলো দু’ধাপে ঘুরাতে হয়, যেন ভুলবশত টিপে ফেলা না যায়। তাই প্রশ্ন উঠেছে— এই সুইচ কেন এবং কীভাবে অফ করা হলো? পাইলটদের মধ্যে কী ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল? এই বিষয়গুলোর গভীরে যাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
এই রিপোর্ট হয়তো প্রযুক্তিগত ব্যাখ্যা দিচ্ছে, কিন্তু যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন, তাদের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি মিলছেনা। এক নারী জানান, তার স্বামী সেই বিমানে ছিলেন। তার ১১ বছরের ছেলেটি প্রায়ই জিজ্ঞেস করে— বাবা কেন মারা গেল?” তিনি জানান, ‘রিপোর্ট যতই বিস্তারিত হোক, তার স্বামীকে তো আর ফিরে পাবে না।’
এই রিপোর্ট এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে। পুরো তদন্ত শেষ হতে আরও কয়েক মাস, এমনকি এক বছরও লেগে যেতে পারে। তবে প্রাথমিকভাবে এটা স্পষ্ট যে বিমানের কোন যান্ত্রিক ত্রুটি ছিল না, বরং ভুল সিদ্ধানন্তের পর তা শোধরাতে ক্ষণিকের বিলম্ব কেড়ে নিয়েছিল এতগুলো মানুষের প্রাণ।