দেশের ফুটবল মাঠে যে নামটা আনন্দ আর গর্বের প্রতীক ঋতুপর্ণা চাকমা। বাহরাইন, মায়ানমার আর তুর্কমেনিস্তানের বিপক্ষে একের পর এক গোল করে এশিয়ান কাপে বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ করেছেন। কিন্তু পাহাড়ের তার ঘরে চলছে কঠিন যুদ্ধ। যেখানে মায়ের ক্যান্সার আর আর্থিক অনিশ্চয়তায় প্রতিদিন লড়াই করতে হয় এই তারকা ফুটবলারকে।
রাঙামাটির মঘাছড়ির দুর্গম প্রায় তিন কিলোমিটার হাঁটা পথে ঋতুপর্ণার বাড়ি। ২০১৫ সালে বাবাকে হারিয়েছেন লিভার ক্যান্সারে, ২০২২ সালে ছোট ভাই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। এখন একমাত্র ভরসা অসুস্থ মা, যিনি গত দেড় বছর ধরে ক্যান্সারের সঙ্গে লড়ছেন।
বাংলাদেশকে দুইবার নারী সাফ চ্যাম্পিয়ন করেছেন, এবার এশিয়ান কাপের ইতিহাস গড়েছেন। অথচ ঋতুপর্ণা ও তার পরিবারকে এখনো প্রতিশ্রুত ঘর, রাস্তা আর চিকিৎসার জন্য লড়তে হচ্ছে। নিয়মিত বেতনও বন্ধ, ফলে মায়ের চিকিৎসা চালানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঋতুপর্ণার বড় বোন পাম্পী চাকমা বলেন, ‘আমরা নিজেরা সংসার করি, কিন্তু মায়ের দেখভালের জন্য ঋতুকেই সব করতে হচ্ছে। মাসে অনেক খরচ হয় চিকিৎসায়। সরকারের কাছে অনুরোধ, মা-বোনের জীবনযাপন যেন একটু স্বস্তির হয়।’
সাফে সাফল্যের পর ঋতুপর্ণাকে ঘর করে দেওয়ার কথা হয়েছিল, রাস্তার প্রতিশ্রুতিও এসেছিল। প্রশাসন জানায়, বরাদ্দ হয়েছে, কাজও চলছে। তবে বাস্তবায়ন এখনো অসম্পূর্ণ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, অনুমোদন প্রক্রিয়ায় কিছু দেরি হচ্ছে, তবে দ্রুত কাজ শেষ হবে।
একদিকে দেশের হয়ে সাফল্য, অন্যদিকে পরিবারের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। ঋতুপর্ণার গল্প শুধু তার একার নয়, দেশের অনেক ক্রীড়াবিদেরই।
ঋতুর মা ভূজোপতি চাকমা, যিনি ক্যান্সারের কষ্ট নিয়েও মেয়ের সাফল্যে স্বপ্ন দেখেন, বলেন, ‘ও খেলতে গেলে ফোন করে, বলে, মা আমি বিশ্বকাপে খেলতে চাই।’
কিন্তু সেই স্বপ্নপূরণের আগে দরকার জীবনের নিরাপত্তা, পরিবারের স্বস্তি। এখন প্রশ্ন, ঋতুপর্ণার জন্য রাষ্ট্র আর সমাজ কতটা পাশে দাঁড়াবে? কঠিন এই পথচলায় ঋতু যে শুধু দেশের হয়ে গোলদাতা নন, জীবনের যোদ্ধাও।