সময়ের জনমাধ্যম

উৎপাদন বন্ধের মুখে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র, রামপালে স্বস্তি

কয়লা সংকটের কারণে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হতে চেলেছে। ডলার সংকটে বিল বকেয়া থাকায় কয়লা সরবরাহ বন্ধ রয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এর ফলে বাড়তে পারে লোডশেডিং।

বর্তমানে যে পরিমাণ কয়লা আছে, তা দিয়ে একটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন চলবে আগামী ২ জুন পর্যন্ত। কয়লা আসার কথা জুন মাসের শেষ নাগাদ, তখন আবার উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এর আগে ২৫ মে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট বন্ধ করা হয়েছে।

তিন বছর আগে উৎপাদনে আসার পর এবারই প্রথম পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হতে বসেছে। এর আগেও ডলার সংকটের কারণে কয়লা কিনতে না পারায় দুই দফায় বন্ধ হয়েছিল বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। যদিও এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বর্তমানে চলমান রয়েছে।

পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিট মিলে উৎপাদনের সক্ষমতা ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এই কেন্দ্রের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই কেন্দ্রটি দিনে গড়ে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল। কয়লা না থাকায় ২৫ মে একটি ইউনিট বন্ধ করা হয়। এখন ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বাকি ইউনিট থেকে দিনে ৪৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। এভাবে ২ জুন পর্যন্ত চলতে পারে। এরপর আগামী ৩ জুন থেকে প্রায় এক মাসের জন্য পুরো উৎপাদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

তারা আরও বলেন, কয়লা আসতে কমপক্ষে ২৫ দিন সময় লাগতে পারে। ফলে জুনের শেষ সপ্তাহে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে এখানে।

এ নিয়ে বিসিপিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এম খোরশেদুল আলম জানিয়েছেন, বৈশ্বিক ডলার সংকটের মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ডলার সরবরাহের চেষ্টা করছে। এ মাসের মধ্যেই ১০ কোটি ডলার ব্যবস্থা করার আশ্বাস দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার পাওয়া গেছে, তা দিয়ে কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে রাজি করানো হচ্ছে। ফলে তারা নতুন করে কয়লা সরবরাহ শুরু করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, ‘কয়লা আসতে অন্তত ২৫ দিন সময় লাগতে পারে। সেই হিসাবে জুনের শেষ সপ্তাহে আবার বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হতে পারে।’

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, তিন বছর ধরে পায়রা থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে। এটি এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এ বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গেলে উৎপাদন অনেক কমে যাবে। এটি বন্ধ হলে বিদ্যুতের চাহিদা ও উৎপাদনের মধ্যে বড় তফাৎ দেখা দেবে। এর ফলে লোডশেডিংও বাড়তে পারে। এমনিতেই গ্যাসের অভাবে অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না বলেও জানান তারা।

অন্যদিকে, জ্বালানিসংকটে ২৩ দিন বন্ধ থাকার পর ফের উৎপাদন শুরু হয়েছে কয়লাভিত্তিক রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের। ১৬ মে রাত ৯টা ১০ মিনিটে রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়েছিল। এর চার দিন পর এটি আবার চালু হয়। কিন্তু কয়লার অভাবে ২৪ এপ্রিল থেকে ফের বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

এর আগে কয়লার অভাবে ১৪ জানুয়ারি থেকে এ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। মূলত, ডলার সংকটে ঋণপত্র খুলতে না পারায় কয়লা আমদানি নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এক মাস পর উৎপাদনে ফিরেছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি।

ভারত-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানায় নির্মিত রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি গত ডিসেম্বরে একটি ইউনিট উৎপাদনে আসার পর এ পর্যন্ত কয়েক দফায় বন্ধ হয়েছে। চুক্তির প্রায় ১০ বছর পর গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বাণিজ্যিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করে।

বিআইএফপিসিএলে উপমহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম প্রথম আলোকে বলেন, আপাতত কয়লার সরবরাহ নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। এখন বিদ্যুৎকেন্দ্রে আরও ২৫ দিনের কয়লা মজুত আছে। নতুন করে আরও কয়লা আমদানি করা হচ্ছে।