দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে ফের শান্তি আলোচনা শুরু হচ্ছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) নিশ্চিত করেছেন যে, ইতোমধ্যে ইস্তাম্বুলে পৌঁছেছে রুশ প্রতিনিধি দল। একই দিনে ইউক্রেনের এক কর্মকর্তা জানান, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও তার প্রতিনিধি দলও আংকারার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন।
রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেডিনস্কি। এই দলে আরও তিনজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও চারজন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। তবে, পুতিনের অনুপস্থিতি নিয়ে পশ্চিমা নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, রাশিয়া সত্যিই শান্তি চায় কিনা।
ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি প্রথমে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে সরাসরি বৈঠক করবেন। এরপর রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য অপেক্ষা করবেন। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোদোলিয়াক স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘জেলেনস্কি কেবল পুতিনের সঙ্গেই আলোচনায় বসবেন।’
এখনও পর্যন্ত ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিদের মধ্যে আলোচনা কখন এবং কোথায় অনুষ্ঠিত হবে, তা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও এরদোয়ানের বৈঠকের পরই এই বিষয়ে স্পষ্টতা আসবে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, আলোচনা একটি প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে হওয়ার কথা রয়েছে।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের পরিবর্তে সরাসরি আলোচনার ওপর জোর দিয়েছে রাশিয়া। বুধবার রাতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেন। এর আগে ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়াকে ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও, সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন পুতিন।
মস্কো এই নতুন আলোচনাকে ২০২২ সালের যুদ্ধের শুরুতে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত আলোচনার ‘পুনরায় সূচনা’ হিসেবে দেখছে। তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রাশিয়ার প্রস্তাবগুলো বাস্তবসম্মত নয়, বরং একতরফা চাপ সৃষ্টির কৌশল।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান এই আলোচনাকে একটি নতুন সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘তিন বছরের দুঃসহ যুদ্ধের পর এখন এক নতুন সুযোগ এসেছে। আমরা আশা করছি, ইস্তাম্বুলের আলোচনা একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।’
অন্যদিকে, ন্যাটো পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই সিবিহা যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট সেক্রেটারি মার্কো রুবিও ও সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় শান্তি আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, রাশিয়া এখনও পর্যন্ত কোনো গঠনমূলক পদক্ষেপ নেয়নি।
ফ্রান্স ও ফিনল্যান্ডসহ ইউরোপের অনেক নেতাই আলোচনার পক্ষে এবং যুদ্ধবিরতির সমর্থনে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে একটি চেয়ার খালি পড়ে আছে—ভ্লাদিমির পুতিনের চেয়ার। এটা প্রমাণ করে, শান্তি আলোচনায় অনাগ্রহী পক্ষ একমাত্র রাশিয়াই।’
এদিকে, পশ্চিমা বিশ্ব ইতোমধ্যে সতর্ক করে জানিয়েছে, যদি এই আলোচনা কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করতে না পারে, তাহলে রাশিয়ার ওপর আরও নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।