রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে প্রধান নির্বাচন সিইসিসহ অন্য কমিশনারদের উপস্থিতিতেই হট্টগোল হয়েছে। রোববার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের শুনানির এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে।
এসময় বিএনপি নেত্রী ও সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ করতে হয়। এরপর হট্টগোলের কারণে সংশ্লিষ্ট আসন দুটির শুনানি সংক্ষিপ্ত করে বিবদমান পক্ষগুলোকে সভাকক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করা হয়।
এর আগে দুপুর ১২টায় ইসি সচিবালয় মিলনায়তনে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে আপত্তির শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিব উপস্থিত ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ও ৩ আসনের সীমানা নিয়ে শুনানির এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়, এরপর শুরু হয় হাতাহাতি।
শুনানিতে অংশ নিয়ে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা সীমানা পুনর্নির্ধারণের খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। অন্যদিকে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী এক নেতার অনুসারীরাসহ বেশ কয়েকজন খসড়ার বিরোধিতা করেন। তাদের দাবি, বিজয়নগর উপজেলাকে অখণ্ড রাখতে হবে। বিজয়নগরের তিনটি ইউনিয়নকে (বুধন্তি, চান্দুরা ও হরষপুর) ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে যুক্ত করার প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন তারা।
এই উত্তেজনা নির্বাচন ভবনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানেও দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যরা এক পক্ষকে ফটকের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে নির্বাচন ভবনের সামনে জলকামানও প্রস্তুত রাখা হয়।
এ ঘটনার পর সাংবাদিকদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। তিনি বলেন, 'গত ১৫ বছরে যা হয়নি, আজ তা-ই হলো। অলমোস্ট আমার গায়ে ধাক্কা দিয়ে আমাকে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। বিএনপির যে নেতা-কর্মীদের জন্য ১৫ বছর ধরে লড়াই করেছি, তারাই এখন আমাকে ধাক্কা দেয়। তো ঠিক আছে, ধাক্কার বদলে তো ধাক্কা আসবেই।'
তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচনের আগে সীমানা নিয়ে যদি নিজ দলের মধ্যেই এমন পরিস্থিতি হয়, তাহলে কে জানে নির্বাচনে কী হবে।'
রুমিন ফারহানা বলেন, 'অত্যন্ত দুঃখজনক ও লজ্জাজনক ঘটনা। আমি একজন আইনজীবী হিসেবে নিজের মামলার শুনানি নিজেই করতে এসেছিলাম। কিন্তু ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের একজন মনোনয়নপ্রত্যাশী ২০-২৫ জন লোক নিয়ে এসে গুণ্ডার মতো আচরণ করেছেন।'
এদিকে, বিকেল পৌনে ৩টার দিকে এনসিপির কয়েকজন কর্মী ইসি ভবনের ২ নম্বর গেইট দিয়ে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। তারা বলেন, ইসি ভবনের ভেতরে বিএনপি গুণ্ডামি করছে। তবে নিরাপত্তাকর্মীরা তাদেরকে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি।
আজ ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, ৩, ৫; কুমিল্লা-১,২, ৬, ৯, ১০ ও ১১; নোয়াখালী-১, ২, ৪ ও ৫, চাঁদপুর-২ ও ৩, ফেনী-৩, লক্ষ্মীপুর-২ ও ৩ সংসদীয় আসনের শুনানি হয়। বুধবার পর্যন্ত এই শুনানি চলবে।
এর আগে, গত ৩০ জুলাই সবগুলো সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণ করে খসড়া প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এতে ভোটার সংখ্যার সমতা আনতে গিয়ে গাজীপুর জেলায় একটি আসন বাড়িয়ে ছয় করা হয়। অন্যদিকে, বাগেরহাটের আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটির প্রস্তাব করা হয়।
১০ আগস্টের মধ্যে ৮৩টি সংসদীয় এলাকার সীমানা নিয়ে ১ হাজার ৭৬০টি দাবি-আপত্তির আবেদন নির্বাচন কমিশনে জমা হয়। আজ রোববার শুরু হওয়া এই শুনানি চলবে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত। এই চারদিন দাবি-আবেদন নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করবে ইসি।