মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোয় হামলাকে “চমৎকার সামরিক সাফল্য” হিসেবে আখ্যা দিলেও দেশজুড়ে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। বিশেষ করে বিরোধীদল ডেমোক্র্যাটদের একাংশ অভিযোগ তুলেছেন—এই হামলা মার্কিন সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
ডেমোক্র্যাট সিনেটর ক্রিস্টোফার ভ্যান হোলেন বলেন, ‘ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন অথচ এখন তিনি আমেরিকাকে একটি নতুন যুদ্ধে জড়িয়েছেন। তার এই সিদ্ধান্ত মার্কিন সংবিধানকে অবজ্ঞা করে যেখানে বলা আছে, কেবল কংগ্রেসই যুদ্ধ ঘোষণার অধিকার রাখে।’
‘অভিশংসনযোগ্য অপরাধ’
কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজের ভাষায়, ‘এই সিদ্ধান্ত ওয়্যার পাওয়ার্স রেজল্যুশন এবং সংবিধানের সরাসরি লঙ্ঘন। প্রেসিডেন্ট এমন একটি যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়েছেন, যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম পর্যন্ত আমাদের জড়াতে পারে। এটি স্পষ্টভাবে অভিশংসনের যোগ্য অপরাধ।’
মার্কিন সংবিধান কী বলছে?
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া যুদ্ধ ঘোষণা করা যায় না। তবে প্রেসিডেন্ট জাতীয় জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারেন। সমালোচকদের দাবি, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো কোনো তাৎক্ষণিক হুমকি ছিল না।
সিআইএ ও যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মার্চ মাসের রিপোর্টেও বলা হয়েছিল—ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে নেই।
আইনি ভিত্তি নেই?
ট্রাম্প প্রশাসন এখনো হামলার কোনো আইনি ভিত্তি উপস্থাপন করেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ২০০১ ও ২০০২ সালের এইউএমএফ (Authorisation for Use of Military Force) আইনকে সামনে আনতে পারেন—যার আওতায় ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের’ নামে ইরাক, আফগানিস্তান ও লিবিয়ায় হামলা চালানো হয়েছিল।
জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রায়ান ফিনুকেন বলেন, ‘এই হামলা স্পষ্টভাবেই অবৈধ। এমনকি নির্বাহী শাখার নিজস্ব ব্যাখ্যা অনুযায়ীও এটি যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হয়, যার জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন।’
কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ সীমিত
যদিও কংগ্রেস হামলা বন্ধে একটি প্রস্তাব আনার কথা ভাবছে, তবে হাউস ও সিনেটে রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণ থাকার কারণে তা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম। সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, ‘এটি অত্যন্ত ঘৃণ্যভাবে সংবিধানবিরোধী। প্রেসিডেন্টের এককভাবে যুদ্ধ শুরুর কোন অধিকার নেই। এই ক্ষমতা একমাত্র কংগ্রেসের।’
গণবিরোধিতা ও ‘মেগা’ সমর্থকদের ক্ষোভ
ট্রাম্পের নিজস্ব “মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন (MAGA)” সমর্থকরাও এই সিদ্ধান্তে হতাশ। তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন—ট্রাম্প নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলেছিলেন, তিনি আমেরিকাকে আরেকটি মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেবেন না। বরং দেশের অর্থনীতি ও অভ্যন্তরীণ উন্নয়নেই মনোযোগ দেবেন।
এ প্রসঙ্গে সাবেক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেন, আজ রাতে প্রেসিডেন্ট সংবিধানকে উপেক্ষা করে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া একতরফাভাবে সামরিক হামলা চালিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের কাছ থেকে জবাব চাইবো।’