মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক যুদ্ধের ভয়াবহতা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। গত মাসের ইরান-ইসরায়েল সংঘর্ষে ইরানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের ভেতর বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। যুদ্ধ শেষে এখন একে একে বেরিয়ে আসছে ক্ষতির প্রকৃত চিত্র।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ শেষে ২৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত যুদ্ধবিরতিকে “ঐতিহাসিক বিজয়” হিসেবে আখ্যা দিলেও, বাস্তবে ইসরায়েলকেও বড় মাশুল গুনতে হয়েছে। নেতানিয়াহু নিজেও স্বীকার করেছেন, যুদ্ধের ক্ষতি এবং প্রাণহানির পরিমাণ কম নয়।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ইরানের হামলায় ২৯ জন নিহত হয়েছেন এবং প্রায় ৩,২০০ জন আহত হয়েছেন, যাদের অনেকেই গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুধু প্রাণহানিই নয়, দখলদার দেশটির অর্থনীতি ও অবকাঠামোতেও পড়েছে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব।
ইসরায়েলের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পুরো যুদ্ধের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০ বিলিয়ন শেকেল, যা প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ। এর মধ্যে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৩ থেকে ৫ বিলিয়ন শেকেল।

দেশটির বিভিন্ন শহরে হাজারেরও বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। তেল আবিব, রামাত গান, নেস জিওনা এবং বাত ইয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে ক্ষয়ক্ষতি ছিল সবচেয়ে বেশি। দক্ষিণের বিয়ার শেভা ও উত্তরের হাইফায়ও ব্যাপক ক্ষতির খবর মিলেছে।
এছাড়া রেহোভোটের ওয়েইজম্যান বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, হাইফার তেল শোধনাগার ও বিয়ার শেভার সোরোকা হাসপাতালে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সরাসরি ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩ বিলিয়ন শেকেলের মতো বলে অনুমান করা হচ্ছে। বিজ্ঞানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ওয়েইজম্যান ইনস্টিটিউটের ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদে আরও ভয়াবহ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এত বড় ধ্বংসযজ্ঞের পরও সব ক্ষতির খবর প্রকাশ হয়নি। ইসরায়েলি সেন্সরশিপের কারণে দেশের সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর ইরানি হামলার প্রকৃত চিত্র গোপনই রয়ে গিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরান পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে রয়েছে তেলআভিভের কিরিয়া সামরিক ঘাঁটি, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর কার্যালয়ও অবস্থিত। ক্ষতির কারণে এই কার্যালয় চার মাসের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলি বামপন্থী সাংবাদিক রবিভ ড্রুকার সেন্সরশিপের সমালোচনা করে বলেছেন, ‘সরকার আসলে বাস্তব পরিস্থিতি লুকিয়ে জনগণের মনোবল ধরে রাখতে চাইছে। সত্যি হলো, আমরা নিজেরাই ভয় পেয়েছি।’
যুদ্ধের সামরিক ব্যয়ও কম নয়। ইসরায়েলি সরকার সূত্র মতে, অস্ত্র, জ্বালানি, বিমান, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরিচালনা এবং ইরানের ওপর চালানো হামলায় রিজার্ভ সেনা মোতায়েনের ব্যয় মিলে ২০ বিলিয়ন শেকেল (৫.৬ বিলিয়ন ডলার) ছাড়িয়ে গেছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের সহায়তায় প্রায় ৩৬টি থাড ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে, যার প্রতিটির মূল্য প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার। ফলে এই যুদ্ধ শুধু ইসরায়েল নয়, আমেরিকার জন্যও বড় ধরনের সামরিক ব্যায়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
আপাতত যুদ্ধ থামলেও ইসরায়েলের অর্থনীতি ও নিরাপত্তা খাতে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব থেকে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকরা।