‘আল্লাহ তুমি আমার বাচ্চাটারে সুস্থ করে দাও’


উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩২ জনে। বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত দেড় শতাধিক মানুষ। আহত-নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। আহতদের মধ্যে জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আছে ৪৩ জন। দগ্ধ শরীরের যন্ত্রণায় ছটফট করছে তারা।
বুধবার সকালে জাতীয় বার্ন ইউনিট ঘুরে দেখা গেছে, চিকিৎসাধীন শিশুদের স্বজনরা কাঁদছিলেন। কেউ উঁকি দিয়ে দগ্ধ মানুষটি কেমন আছে, তা একনজর দেখার চেষ্টা করছেন। তাদের সুস্থতায় অশ্রুসিক্ত চোখে দু’হাত তুলে প্রার্থনা করছেন অভিভাবকরা।
অনেককেই দেখা গেছ, ওয়ার্ড থেকে আইসিইউতে ছোটাছুটি করছেন। আবার কেউ কেউ হাসপাতালের ভেতরে ঢুকার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু, দগ্ধ শিশুদের সুচিকিৎসায় যাতে কোনও ধরনের ইনফেকশন না ছড়ায়, সেজন্য স্বজনদের প্রবেশ সীমিত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা চিকিৎসাধীন সবাইকে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। গজ-ব্যান্ডেজে ঢাকা শিশুরা যখন যা খেতে চাচ্ছে তা মুহূর্তেই হাজির করার চেষ্টা করছেন আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে হাসপাতালের কর্মীরাও।
বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন শিশুগুলো পুড়ে বা ঝলসে যাওয়ার যন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। বেশিরভাগ অভিভাবকই পোড়া জায়গায় হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে দগ্ধ শিশুদের একটু স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
বার্ন ইউনিটে ভর্তি থাকা এক অভিভাবককে দেখা গেছে, ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে হাসপাতালের ফ্লোরে বসে কাঁদছিলেন তিনি। একটু পর পর দোয়া করছিলেন, ‘আল্লাহ তুমি আমার বাচ্চাটারে সুস্থ করে দাও।’
ওই অভিভাবকের ছেলে মাহতাব রহমান ভূঁইয়া (১৫) মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি ভার্সনের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। দুর্ঘটনায় শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ পুড়ে গেছে তার। বর্তমানে আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে ছেলে মাহতাব। ছেলের সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান তিনি।
তামজিদ হোসেন নামে আরও এক অভিভাবকের সঙ্গে কথা হয়। অশ্রুসজল তামজিদ বলেন, ‘আমার একমাত্র ভাগ্নি, কলিজাটা ফেটে যাচ্ছে তার কান্না দেখে। মুখমণ্ডলসহ শরীরের অনেক অংশ ঝলসে গেছে। ওখানে তীব্র যন্ত্রণা করছে। এসির মধ্যে আছে, তবু বলছে মা বাতাস করো, মামা বাতাস করো। ওরে কখনও কিচেন রুমে যেতে দিতাম না আগুনের তাপ লাগবে বলে আর আজকে সে আগুনে পুড়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে।’
বার্ন ইউনিটের বাইরে অপেক্ষমাণ আত্মীয়-স্বজনদের কেউ কেউ আক্ষেপ করে বলছিলেন, আমাদের সন্তানরা কোথায় নিরাপদ? সন্তানরা যদি স্কুলেও নিরাপদ না হয় তাহলে আমাদের করণীয় কী? এই দেশে কি জীবনের কোনও মূল্য নেই? দেশ ছেড়ে যাওয়ায় কি সমাধান? এই দেশের আইনপ্রণেতার কি কখনোই জীবনের মূল্য বুঝবে না?
তারা প্রশ্ন করেন, ‘এতগুলো প্রাণ যে ঝরেছে এর দায়ভার কার! সরকার কীভাবে এর জবাব দেবে? জবাব দিলেই কী আর এই প্রাণগুলো ফিরে আসবে? ছোট ছোট বাচ্চাগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যারা বেঁচে আছে তারা মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করছে। জ্বালা-যন্ত্রণায় অনবরত কান্না করছে।’