‘আঙুল তোলার আগেই পারমাণবিক সম্ভাবনা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে’


পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানকে ফের কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ইরানের পারমাণবিক সম্ভাবনাকে এত দ্রুত মুছে ফেলা হবে যে, কেউ ‘আঙুল তোলার আগেই’ তা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
সোমবার স্কটল্যান্ডে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের উপস্থিতিতে তিনি এমন হুমকি দেন। সম্প্রতি তেহরান বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরই ট্রাম্পের এই কড়া মন্তব্য এলো।
চলতি বছর ইরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে তেহরান ও ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে আলোচনা চলছিল। গত জুনে ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর সেই আলোচনা ভেস্তে যায়। গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে আলোচনার আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জোর দিয়ে বলেছিলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার ইরানের আছে। এই আলোচনাকে ইরানি কর্মকর্তারা ‘গুরুত্বপূর্ণ, খোলামেলা ও বিস্তারিত’ বলে বর্ণনা করলেও, কোনো বড় অগ্রগতি বা সাফল্যের ঘোষণা আসেনি।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, ‘ইরান খুব খারাপ সংকেত দিচ্ছে, খুবই বাজে বার্তা পাঠাচ্ছে।’
এরপর তিনি আরও কঠোর ভাষায় বলেন, ‘তাদের (ইরান) এটা করা উচিত নয়। আমরা তাদের পারমাণবিক সম্ভাবনাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছি। তারা আবার এটা শুরু করতে পারে। যদি তারা করে, আপনি আঙুল তোলার আগেই আমরা সেটা নিশ্চিহ্ন করে দেব। আমরা এটা আনন্দের সঙ্গেই করব, খোলাখুলিভাবে ও নির্দ্বিধায়।’
ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পর আব্বাস আরাগচি পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছেন, ইরান কখনোই হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো ভাষায় সাড়া দেবে না। তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, চিকিৎসা ও বেসামরিক কারণে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রয়োজন। যদি ইরান আবারও হামলার শিকার হয়, তাহলে আরও দৃঢ়ভাবে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে তেহরান দ্বিধা করবে না।
ইসরায়েলও ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। গত রোববার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘আমি এখান থেকে ‘স্বৈরশাসক’ খামেনিকে স্পষ্ট করে একটি বার্তা দিতে চাই, আপনি যদি ইসরায়েলকে হুমকি দেওয়া অব্যাহত রাখেন, আমাদের লম্বা হাত আরও শক্তিশালী হয়ে আবারও তেহরান অবধি পৌঁছে যাবে। এবার ব্যক্তিগতভাবে আপনার কাছেও পৌঁছে যাবে।’
বিশ্লেষকদের মতে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের যেকোনো ধরনের হামলা শুরু করার জন্য কার্যত যুক্তরাষ্ট্রের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। গত জুনে ইরানের তিনটি বড় পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর থেকেই পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত।
গত সপ্তাহে আল-জাজিরার সঙ্গে কথা বলার সময় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছিলেন, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি ত্যাগ করবে না, তবে আলোচনার দরজা খোলা রাখবে। ইসরায়েলের সঙ্গে ১২ দিনের সংঘাতের পর যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে, সেটি স্থায়ী হওয়া নিয়ে তিনি খুব বেশি আশাবাদী নন বলেও জানান।