২০২৬ সাল থেকে নির্দিষ্ট ৬০০টি পর্যটন এলাকায় সীমিতভাবে মদ বিক্রির অনুমতি দিতে যাচ্ছে সৌদি আরব। ২০৩৪ ফুটবল বিশ্বকাপ সামনে রেখে বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে এ অভূতপূর্ব পদক্ষেপ নিচ্ছে দেশটি দেশটি।
এই ঐতিহাসিক নীতিগত পরিবর্তনের ফলে বিলাসবহুল হোটেল, পাঁচতারা রিসোর্ট ও পর্যটন উন্নয়ন প্রকল্পে ওয়াইন, বিয়ার ও সাইডার বিক্রি করা যাবে। তবে স্পিরিট বা ২০ শতাংশের বেশি অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় পুরোপুরি নিষিদ্ধ থাকবে। সাধারণ জনগণের জন্য বা দোকান, বাড়ি, খোলা জায়গা কিংবা ফ্যান জোনে অ্যালকোহল সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধই থাকবে।
এই উদ্যোগ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বাধীন ‘ভিশন ২০৩০ পরিকল্পনার অংশ, যার লক্ষ্য দেশটিকে বিশ্ব পর্যটনের এক কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা।
সরকার জানিয়েছে, শুধুমাত্র নির্ধারিত লাইসেন্সধারী ভেন্যুতে প্রশিক্ষিত কর্মীদের মাধ্যমে অ্যালকোহল পরিবেশন করা যাবে। প্রতিটি স্থানে কঠোর নিয়ম মেনে এই সেবা চালু করা হবে, যাতে সৌদি সংস্কৃতি ও নৈতিকতা বজায় থাকে।
নিওম, সিনদালাহ দ্বীপ এবং রেড সি প্রজেক্টের মতো আধুনিক ও বিলাসবহুল এলাকাগুলোতে এই নীতির প্রয়োগ শুরু হবে।
সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা বিশ্বকে স্বাগত জানাতে চাই, তবে নিজেদের সাংস্কৃতিক পরিচয় হারাতে চাই না। আমাদের লক্ষ্য হলো বিশ্বকে দেখানো যে সৌদি আরব আধুনিক হতে পারে– নিজের ঐতিহ্য বজায় রেখেও।”
এদিকে, ইতোমধ্যে অনেক আন্তর্জাতিক হোটেল চেইন তাদের নকশা ও পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে, যেন তারা অ্যালকোহল পরিবেশনের উপযোগী অঞ্চল তৈরি করতে পারে। এতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা বাড়বে বলে মনে করছেন পর্যটন বিশ্লেষকরা।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যে সৌদি রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালিদ বিন বান্দার আল সউদ ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০৩৪ বিশ্বকাপে অ্যালকোহল নিষিদ্ধ থাকবে। তিনি বলেছিলেন,
“আমরা অতিথিদের স্বাগত জানাই, তবে আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তন করবো না।”
এই সিদ্ধান্ত কাতারের বিশ্বকাপের সময়ের ব্যবস্থার সঙ্গে কিছুটা ভিন্ন। কাতারে কিছু হোটেলে সীমিতভাবে মদ পাওয়া গেলেও, স্টেডিয়ামে তা নিষিদ্ধ ছিল।
সৌদি আরব জানিয়েছে, এই পরিবর্তন হবে কঠোর নিয়ন্ত্রণের আওতায়, যাতে অপব্যবহার রোধ করা যায়। কেউ আইন ভঙ্গ করলে তাৎক্ষণিক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, সৌদি আরব অনেকটা দুবাই এবং বাহরাইনের মডেল অনুসরণ করছে, যেখানে মদ বিক্রির মাধ্যমে পর্যটন বাড়ানো হলেও স্থানীয় সংস্কৃতি রক্ষা করা হয়েছে।