অনলাইন স্বাধীনতার প্রশ্নে মুখোমুখি মোদি সরকার ও এক্স


ভারত সরকার এবং ইলন মাস্কের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এর মধ্যে অনলাইন বাক-স্বাধীনতা নিয়ে তীব্র সংঘাত তৈরি হয়েছে। এই আইনি ও আদর্শিক লড়াই বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে।
এই বিতর্কের সূত্রপাত হয় ২০২১ সালে, যখন ভারতে কৃষক আন্দোলন তুঙ্গে ছিল। সে সময় এক্স প্ল্যাটফর্মে আন্দোলন-সংশ্লিষ্ট প্রচুর পোস্ট ছড়িয়ে পড়ে। ভারত সরকার এই পোস্টগুলোকে দেশের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে এবং এগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য এক্স-কে নির্দেশ দেয়। সরকারের দাবি ছিল, এই পোস্টগুলো “ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র”।
এক্স কিছু পোস্ট সরিয়ে নিলেও সরকারের সব নির্দেশ মানতে অস্বীকার করে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এক্স-এর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া এবং কর্মীদের গ্রেপ্তারের হুমকি দেয়। এই পরিস্থিতিতে ইলন মাস্ক সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তার অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সরকারের আদেশ মেনে নিতে বাধ্য হই। নয়তো আমাদের কর্মীদের বিপদ হতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি এসব অনুরোধের সঙ্গে একমত নই।’ মাস্ক আরও যোগ করেন, ‘আমরা অভিব্যক্তির স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি। কিন্তু অনেক সময় সরকার আমাদের এমন কিছু করতে বলে যা এই স্বাধীনতার পরিপন্থী।’
ভারত সরকার তাদের পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলছে যে, তারা জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই ধরনের পোস্টগুলো দেশের সংহতি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
সমালোচকরা বলছেন, এটি আসলে অনলাইন সেন্সরশিপের একটি উদাহরণ এবং সরকারের এমন পদক্ষেপ ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে বাক-স্বাধীনতার ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করছে।
এই আইনি লড়াই এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন মাস্কের অন্যান্য বড় প্রতিষ্ঠান, যেমন টেসলা এবং স্টারলিংক, ভারতের বিশাল বাজারে প্রবেশের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে ভারত সরকারের সঙ্গে ইলন মাস্কের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত কীভাবে সমাধান হয়, তার ওপর শুধু অনলাইন স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ নয়, বরং মাস্কের ভারতীয় বাজার পরিকল্পনার অনেকাংশ নির্ভর করছে।