সময়ের জনমাধ্যম

মেসির কোলে চড়া শিশুটি ছাড়িয়ে গেছে তাঁকে

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল! ইন্টার মিলানের বিরুদ্ধে বার্সেলোনার শ্বাসরুদ্ধকর লড়াই! ৩-৩ গোলের ড্র, কিন্তু স্পটলাইটে ছিলেন একজনই… লামিন ইয়ামাল! ১৮ বছর পূর্ণ না হওয়া এক কিশোর, ইন্টার-বার্সা মহারণে দ্যুতি ছড়িয়েছেন। যখন বার্সা ২-০ গোলে পিছিয়ে, ঠিক তখনই ত্রাতা হিসেবে হাজির তরুণ তুর্কি।

২৪ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় এক অসাধারণ গোল! শুধু বার্সাকে ম্যাচে ফেরানোই নয়, এই গোলে রিয়াল তারকা এমবাপ্পেকে টপকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গোল স্কোরার বোনে গেলেন ইয়ামাল!

বিশ্বের তারকা ফুটবলাররাও ইয়ামালের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। ম্যানচেস্টার সিটির গোলমেশিন আর্লিং হালান্ডের স্নাপচ্যাট পোস্টে ঝরলো মুগ্ধতা, লিখলেন “This guy is incredible.” প্রতিপক্ষের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার আলেসান্দ্রো বাস্তোনিও ইয়ামালের প্রশংসা করতে দ্বিধা করেননি। তিনি বলেই ফেললেন, “সে হয়তো এখন বিশ্বের সেরা উইঙ্গার। তাকে আটকাতে আমাদের দু-তিনজন লাগছে!”

লামিন ইয়ামাল হতে পারেন ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ট্যালেন্ট। বড় ম্যাচে গোল, দ্বিগুণ বয়সের ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে বারবার নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন তরুণ তুর্কী।

এই পারফরম্যান্সের পেছনে আছে এক শিশু ও তার পরিবারের জীবন সংগ্রামের গল্প। কাতালনিয়ার ছোট শহরে জন্ম, মাত্র তিন বছর বয়সে বাবা-মার বিচ্ছেদ। বাবা পেইন্টার, মা ওয়েট্রেস। জীবন তখন সহজ ছিল না। কিন্তু ফুটবল ছিল আশার আলো। ৪ বছর বয়সে স্থানীয় ক্লাবে খেলা শুরু, ৭ বছরেই স্কাউটদের নজরে। কিছুদিন পরেই ডাক আসে বার্সেলোনা থেকে। লামাসিয়ায় তার যাত্রা শুরুর পর স্ট্রাইকার, লেফট-ব্যাক, উইঙ্গার— খেলেছেন সব পজিশনে। কিন্তু রাইট উইংয়েই থিতু হন ইয়ামাল।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে ডাক পড়ে বার্সার সিনিয়র দলে। ১৬ বছরেই লা লিগার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী স্টার্টার। লা লিগা, চ্যাম্পিয়ন্স লিগ কিংবা জাতীয় দলে রেকর্ড ভাঙা গড়ার মিশনে নেমেছেন ইয়ামাল।

শুধু রেকর্ড ভাঙাই নয়, অনেকেই ইয়ামালের সাথে তুলনা করছেন লিওনেল মেসির। ১৭ বছর বয়সে ইয়ামাল ক্লাব ও দেশের হয়ে খেলেছেন ১১৯টি সিনিয়র ম্যাচ! একই বয়সে মেসি খেলেছিলেন মাত্র ৭টি। ইয়ামালের ঝুলিতে ইতোমধ্যেই ১৫টি গোল এবং ২৪টি অ্যাসিস্ট! তার সামনে হাতছানি দিচ্ছে আরেক ইতিহাস। বার্সেলোনা যদি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং লা লিগা জেতে, তাহলে ইয়ামাল হবেন কনিষ্ঠতম ট্রেবল জয়ী ফুটবলার!

বাবা মরক্কো থেকে এসেছেন, মা ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, তার জন্ম স্পেনে। বুটে থাকা তিনটি পতাকা — মরক্কো, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, এবং স্পেন — শুধু পরিচয় নয়, এ যেন একাধিক সংস্কৃতির সম্মিলিত স্বপ্ন।

১৭ বছর বয়সী ইয়ামাল শুধু ফুটবলের ভবিষ্যৎ নয়, বর্তমানও। গোল্ডেন বয়, হ্যাঁ — বড় কোন ইনজুরিতে না পড়লে সামনে অপেক্ষা করছে আরো বড় কিছু। ইয়ামালের গল্পটা শুরু মাত্র… শেষটা… ইতিহাস লিখবে আগামী প্রজন্মের জন্য।